বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের পক্ষে ইউজিসি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের ভেতর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নকেন্দ্রের (স্টাডি সেন্টার) অনুমোদন নিয়ে বিতর্ক চলছে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, এ ধরনের অনুমোদন আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিও (এপিইউবি) একই কথা বলে আসছে। বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

প্রতিবেদনে জানা যায় এ অবস্থায় বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধন করে খসড়া চূড়ান্ত তৈরি করেছে ইউজিসি। এতে বেশ কিছু শর্তে অধ্যয়নকেন্দ্রের পরিবর্তে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস খোলার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫০০-এর মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব শর্ত পূরণ করে শাখা ক্যাম্পাস খুলতে পারবে। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান গত শনিবার বলেন, তাঁরা সংশোধিত খসড়া প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এতে বিদ্যমান অসংগতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

তবে এপিইউবি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা বাধ্যবাধকতার বিষয় থাকলেও বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেভাবে নেই। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে বলে মনে করে সংগঠনটি।

গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ কলেজের অধ্যয়নকেন্দ্র বাংলাদেশে স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে এপিইউবিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এ অনুমোদনের সঙ্গে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে।

অবশ্য অধ্যয়নকেন্দ্রটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি বলে ইউজিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শনিবার নিশ্চিত করেন। তবে বিধিমালা সংশোধনের পর কেন্দ্রটির কার্যক্রম কীভাবে চলবে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি তাঁরা। এরই মধ্যে গত ২১ নভেম্বর এ ব্যাপারে ইউজিসিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন একজন আইনজীবী।

আগে অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলত। তবে ২০১৪ সালে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা’ জারি করা হয়। অবশ্য কিছু কারণে ২০১৬ সালের নভেম্বরে এটি স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। ইউজিসি ক্যাম্পাস করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর পক্ষে থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান শীর্ষ পর্যায় থেকে অধ্যয়নকেন্দ্রের পক্ষে বলা হয়।

ইউজিসিকে দেওয়া এক চিঠিতে এপিইউবি বলেছে, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক, সেখানে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে লাভজনকসহ আরও কিছু সহজ শর্তে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সংগঠনটি বলছে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। কিন্তু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, অধ্যয়নকেন্দ্র-সংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী উদ্বৃত্ত অর্থসম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন হবে। এটি ‘দ্বৈতনীতি’।

তবে প্রস্তাবিত বিধিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মতো একটা আইন করার কথা বলা হয়েছে বলে জানান ইউজিসির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালায় শাখা ক্যাম্পাসকে লাভজনক বা অলাভজনক—কোনোটাই বলা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নিয়মকানুন এবং অন্যান্য আর্থিক বিধি মানতে হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ দিতে হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ মেনে দিতে হবে। এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না।

ইউজিসি সূত্র জানায়, খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী বিদেশি মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শাখা ক্যাম্পাস খোলা যাবে। যৌথ উদ্যোক্তা থাকতে পারবে না। আবার যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস খুলবে, তাদের দেশের আইনেও এ ব্যাপারে অনুমোদন থাকতে হবে। শাখা ক্যাম্পাসের প্রধান হবেন মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগকৃত একজন সহ-উপাচার্য, ভাইস প্রেসিডেন্ট বা ভাইস রেক্টর। শাখা ক্যাম্পাস থেকে লেখাপড়া শেষে মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাবেন শিক্ষার্থীরা।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলে, এটি বাস্তবতা। তবে দেশে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে। তাই নতুন একটি ধারা শুরু করতে হলে অনেক পর্যালোচনা-আলোচনা প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন একটি আইন দিয়ে পরিচালিত হয়, সে রকম একটি পরিপূর্ণ আইন দিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলতে হবে। অ্যাডহক ভিত্তিতে অনুমোদন দিলে আপত্তি উঠবে। তাই ভালোমন্দ দেখে এটি করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026371479034424