সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজবিদেশি শিক্ষার্থীর আসনে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মেধাতালিকায় না থাকা শিক্ষার্থীর নাম নিবন্ধনের জন্য পাঠানো এবং অনুপস্থিত বিদেশি শিক্ষার্থীর আসনে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অভিযোগ আছে বেসরকারি সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে সাবেক অধ্যক্ষের সই নকল করারও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধাই নেই রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির। সংরক্ষিত তহবিলের টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ আছে। একাধিক চিকিৎসক জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়মনীতির ধার ধারে না। 

জানা যায়, ভর্তি হওয়া তিন বিদেশি শিক্ষার্থীর স্থলে সম্প্রতি তিনজন দেশি শিক্ষার্থীর নাম প্রতিস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই তিন শিক্ষার্থী ২০ হাজার ডলার করে জমা দিয়ে ভর্তি হলেও প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। এই সুযোগে তিনজন দেশি শিক্ষার্থীর নাম পাঠানো হয় সাবেক অধ্যক্ষের নাম ও সই ব্যবহার করে।

এ বিষয়ে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ‘জানতে পেরেছি, ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধকের কাছে বিদেশি শিক্ষার্থীর বিপরীতে দেশি ছাত্র ভর্তির আবেদন করা হয়েছে। সেখানে আমার স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে।’ 

সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফকরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘অধ্যাপক এম এ আজিজের স্বাক্ষর নকল করার সাহস কেউ দেখাবে না। তবে এমন কাজ কেউ করেছেন কি না, আমার জানা নেই।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের দপ্তর থেকে গত ৬ জুন কলেজের অধ্যক্ষের কাছে ১৩ তথ্য জানতে চেয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ১২ জুনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছিল। চিঠিতে যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়, সেগুলোর মধ্যে আছে: কলেজের নামে কেনা মোট জমির পরিমাণ উল্লেখসহ প্রতিটি দলিলের সার্টিফায়েড কপি, জমির নামজারির কপি, শিক্ষকদের প্রমাণকসহ তালিকা, কলেজের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে করা এফডিআরের মূল কপিসহ ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া কলেজের হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরির নিবন্ধন ও নবায়নের মূল কপি, বিএমডিসির স্বীকৃতিপত্র ও নবায়নের হালনাগাদ কপি, কলেজ ও হাসপাতালের মোট অবকাঠামোসহ রাজউক অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যানের কপি, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অ্যাকাউন্টে বেতন পরিশোধের প্রমাণক, একই বছরে হাসপাতালে বিনা মূল্যের শয্যায় রোগী ভর্তির বিবরণসহ তালিকা ইত্যাদি।

জানা যায়, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা পায় মেডিক্যাল কলেজটি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারের নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন করছে না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওই সব তথ্য চেয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একটি জবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিপূর্ণ তথ্য পাঠিয়েছে কি না, সেটি না দেখে বলা যাচ্ছে না।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইনে উল্লেখ আছে, ৫০ শিক্ষার্থীর আসনবিশিষ্ট বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে অন্যূন দুই একর জমি থাকতে হবে। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের নামে কমপক্ষে এক একর জমি থাকতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকে তিন কোটি টাকার সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে জমা রাখতে হবে। ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হলে আরও এক কোটি টাকা রাখতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের একাধিক চিকিৎসক জানান, সংরক্ষিত তহবিলের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।

আইনে বলা আছে, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে দরিদ্র জনগণের জন্য সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় ১০ শতাংশ শয্যা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ ও সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।

প্রতিষ্ঠানের দুজন চিকিৎসক জানান, এই মেডিক্যাল কলেজে এসব নিয়ম মানা হয় না। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজের কার্যক্রম নিয়ম মেনেই করা হয় বলে মনে করি। তবে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটি আমি বলতে পারছি না।’

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘ঢাবির ভেতর দিয়ে সচিবদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ভেতর দিয়ে সচিবদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে’ পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন রূপ নিলো মারামারিতে - dainik shiksha পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন রূপ নিলো মারামারিতে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত কোটা ইস্যুতে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাবি - dainik shiksha কোটা ইস্যুতে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাবি স্কুলে পানি, কাল মূল্যায়ন, চিন্তিত শিক্ষকেরা - dainik shiksha স্কুলে পানি, কাল মূল্যায়ন, চিন্তিত শিক্ষকেরা নতুন কারিকুলাম: গিয়ান, ওরজন ও এগুলে প্রসঙ্গ - dainik shiksha নতুন কারিকুলাম: গিয়ান, ওরজন ও এগুলে প্রসঙ্গ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046069622039795