বিদেশে থেকেও চাকরিতে বহাল অধ্যক্ষ বাবার প্রবাসী ছেলে

বরিশাল প্রতিনিধি |

অধ্যক্ষের ছেলে হওয়ার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে অবস্থান করেও মাদরাসার অফিস সহকারী পদে বহাল রয়েছেন মো. আরাফাত হোসেন ওরফে শাহাদাত হোসেন নামের এক যুবক। বর্তমানে শাহাদাত হোসেন সিঙ্গাপুরে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, প্রবাসে থেকেও মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের ইসলামাবাদ নেছারিয়া আলিম মাদরাসার (আলিম এমপিওভুক্ত) অফিস সহকারী পদে চাকরি করছেন শাহাদাত হোসেন। সরকার প্রদত্ত মাদরাসায় তার মাসিক বেতন-ভাতা (এমপিও) কপিতেও বিল আসছে নিয়মিত।  

শাহাদাত হোসেন উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের মাওলানা ইয়াসিন মুনিরের ছেলে। ইয়াসিন মুনির গাছুয়া ইউনিয়নের ইসলামাবাদ নেছারিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ।

মাদরাসার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এবং শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক জানান, ইসলামাবাদ নেছারিয়া মাদরাসাটি প্রথমে দাখিল পর্যন্ত অনুমোদিত ছিল। ২-৩ বছর আগে অধ্যক্ষ মাদরাসাটিকে আলিম স্তরে উন্নীত করার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। ওই সময় আলিম স্তরের জন্য কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ ইয়াসিন মুনির। অন্য কয়েকজনের সঙ্গে নিজের ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী শাহাদাত হোসেনকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রায় দুই বছর আগে মাদরাসাটি আলিম স্তরে এমপিওভুক্ত হলে আরাফাত হোসেন সিঙ্গাপুর থেকে ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে কয়েক মাস মাদরাসায় দাফতরিক কাজ করেন। সেই সময় সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। পরবর্তীতে ওই বছর মে-জুন মাসে আবার সিঙ্গাপুর চলে যান আরাফাত।

তবে শাহাদাত হোসেন সিঙ্গাপুরে চলে গেলেও তার পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়নি বা নতুন কোনো অফিস সহকারী নিয়োগও দেওয়া হয়নি। উল্টো অধ্যক্ষ ইয়াসিন মুনির বিষয়টি গোপন রাখেন। কেউ শাহাদাত হোসেনের বিষয়ে জানতে চাইলে অসুস্থ বিধায় অফিস করছে না বলে জানানো হয়। একজন অফিস সহকারীর অনুপস্থিতিতে মাদরাসার দাফতরিক কাজে বিলম্বিত ও সমস্যা পড়তে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইয়াসিন মুনির বলেন, তার ছেলে শাহাদাত হোসেন আগে বিদেশে ছিলো। কিন্তু নিয়োগ হওয়ার পর সে দেশেই ছিলো। নিয়মিত তার দায়িত্ব পালন করেছে। তবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে।  

কী রোগে আক্রান্ত, কত দিনের ছুটি নিয়ে গেছে বা সিঙ্গাপুরে কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

বারবার জানতে চাওয়া হলে অধ্যক্ষ মাওলানা ইয়াসিন মুনির বলেন, বর্তমানে তার বেতন-ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে মাদরাসায় যোগদান করতে পারে। তবে কবে দেশে ফিরবে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি অধ্যক্ষ।

মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আরিফ হোসেন সরদার বলেন, বিষয়টি বুধবার দুপুরে আমার কানে এসেছে। এরপর অধ্যক্ষ মাওলানা ইয়াসিন মুনিরকে ফোন দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ আমাকে জানান, তার ছেলে শাহাদাত হোসেন অফিস সহকারী পদে যে বেতন পাচ্ছিল তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ হচ্ছিল না। অর্থাৎ ওই বেতনে তার পোষায় না। এ কারণে শাহাদাত হোসেন ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় ফের সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। তবে অধ্যক্ষ মাওলানা ইয়াসিন মুনির জানিয়েছেন বিদেশে যাওয়ার পর থেকে তার ছেলের ব্যাংক একাউন্ট থেকে বেতন তোলা হয়নি। শাহাদাতের বিষয়টি গোপন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

আরিফ হোসেন সরদার বলেন, বর্তমানে ব্যক্তিগত কাজে আমাকে এলাকার বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে মাদরাসায় গিয়ে শাহাদাত হোসেনের বেতনের বিল ও তার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। এ নিয়ে কেউ মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দেইনি। তবে এখন জানলাম। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025370121002197