কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শত-শত শিক্ষার্থীর। আর মূলত অপ্রয়োজনেই বিদ্যালয় স্থানান্তরের এ অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে এক বছর আগে অভিযোগ করেও সুফল না পাওয়ায় হতাশ স্থানীয়রা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেলার রাজারহাট উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের একমাত্র বিদ্যাপিট বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৯১ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ৩০ শতক জায়গার ওপর স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি। সে বছরই বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকসহ স্টাফ রয়েছেন ১০ জন।
বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৩৭ জন, ৭ম শ্রেণিতে ৩০ জন এবং ৮ম শ্রেণিতে ২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ১৯ জন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত বছর জুন মাসে নদীর ভাঙনের মুখে পড়লে তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে স্থানান্তর করা হয়। বিদ্যালয়ের জন্য জেলা প্রশাসক নতুন ঘর নির্মাণে ৩০ হাজার টাকা এবং ১০ বান্ডিল ঢেউটিন অনুদান দেন।
কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রাতারাতি প্রায় ৫কি.মি. দূরে নাজিম খাঁ ইউনিয়নে তালতলা নামক জায়গায় স্থানান্তর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে করে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাওয়া এবং শত-শত শিক্ষার্থীর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির হাজিরা খাতায় কোনো নামই তোলা হয়নি। অথচ খাতায় বিগতমাস গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ দেখানো হয়েছে। ক্লাস নিয়মিত না হলেও শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেয়েছে এবং শিক্ষকরাও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন বলে জানা যায়।
তৈয়ব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা আমিনুর ইসলাম, আব্দুল হাই জানান, প্রধান শিক্ষক তার স্বার্থের কারণেই বিদ্যালয়টি অন্য ইউনিয়নে নিয়ে গেছে। আমরা গ্রামবাসী বিদ্যালয়ের জন্য জমি দিতে চেয়েছি তারপরও প্রধান শিক্ষক কিভাবে স্কুল অন্য ইউনিয়নে নিয়ে গেলেন।
বিষয়টি বিভিন্ন মহলে লিখিত ভাবে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। অথচ তালতলা থেকে আধা কি.মি. দূরে কালিরহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বাছড়া আজিজিয়া আলিম মাদরাসা, এক কি.মি. দূরে ডাংরারহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাজিম খা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। আর তাদের গ্রাম থেকে তালতলায় স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৪-৫ কি.মি. দূরে বলেও জানান তারা।
স্কুলের শিক্ষার্থী ৮ম শ্রেণির ছাত্রী রীপা রাণী, জেসমিন আক্তার ও ৭ শ্রেণির ছাত্র মাইদুল জানায়, স্কুল দূরে হওয়ায় অনেকেই স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তারা এখন বাবা-মায়ের সঙ্গে খেতে-খামারে কাজ করে।
এ বিষয়ে তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার পর আমাদের বিদ্যালয়ের জমিতে টিনের ঘর করে কয়েক মাস ক্লাস হয়েছিল। তবে হঠাৎ ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানতে পারি তালতলায় স্কুলের নতুন ঘর করে সেখানেই ক্লাস চালু করছে। আমার বিদ্যালয়ের একটি রুমে তাদের আসবাব পত্র রয়েছে। বেশ করেয়কবার বলার পরেও সেগুলো নিয়ে যায়নি।
বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকনাথ বর্মণ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সংবাদ প্রচার না করার জন্য এ প্রতিনিধিকে অর্থের বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টাও করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফ উজ জামান সরকার জানান, এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে বিদ্যালয় স্থানান্তরে বিধিতে নিষেধ আছে কিনা তার জানা নেই।
নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষকের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, তিনি বহুবার সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিদর্শন করে কোনো অনিয়ম পাননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ রাশেদুল হক প্রধান বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টি মাসিক সমন্বয় মিটিং আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান। পরবর্তীতে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।