শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারের দূরাবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সেজন্য মেধা বিকাশে সেগুলোর মানোন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার (৩০ এপ্রিল) গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে তরুণ শিক্ষার্থী সম্মেলনে একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা যখন কোনো বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাই, তখন দেখি বিদ্যালয়ের সবচেয়ে অবহেলিত কক্ষ হচ্ছে তার গ্রন্থাগার। হুট করে গ্রন্থাগারে যেতে চাইলে শুনতে হয়- চাবি নেই। যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নাই। এরপরও কোনোমতে গ্রন্থাগারে ঢুকলে দেখা যায়, বইয়ের উপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে আছে।
বই কেনার বাজেট খরচ ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ওই শিক্ষার্থী ড. মিজানের কাছে জানতে চান, স্কুল কলেজের গ্রন্থাগারের দূরাবস্থা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
উত্তরে তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বইযের দিকেও মনোযোগী হতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গ্রন্থাগার নিয়ে ওই প্রশ্নে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক একেএম নূর-উন-নবী বলেন, বিদ্যালয় গ্রন্থাগারের এই অবস্থা নিরসনে সব বিদ্যালয়ে না হলেও অন্তত সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করা উচিত। এই লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।
সম্মেলনের এই পর্বে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তাদের প্রশ্নে যেভাবে উঠে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়; সেভাবে উঠে এসেছে সমস্যা উতরে ভবিষ্যত গড়ার পথ বাতলে নেওয়ার জিজ্ঞাসাও।
অনুষ্ঠানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, সমান মেধা ও যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে গেলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় কেন?
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হুমায়ুন খালিদ বলেন, আমরা যখন পিএসসিতে বিসিএসের ভাইভা নিই তখন তাদের মধ্যে পার্থক্যটা দেখতে পাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সাবজেক্টে চান্স না পাওয়ার পরই বেশিরভাগ প্রাইভেটে যায়। তবে এই ব্যবধান এখন অনেকটা ঘুচে আসছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনেক ক্ষেত্রে ভাল করছেন।
এই প্রশ্নের উত্তরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে অভিহিত করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড আর ইয়েলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি হলেও তারা সেই মানের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেটা না করে কেবলই বাণিজ্য করছে কেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
এভারেস্ট বিজয় কীভাবে করা যায়- শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নে এমএ মুহিত বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা এভারেস্ট থাকে। সেটা তার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলে তার এভারেস্ট জয় হয়ে যাবে। এভারেস্ট জয়ের জন্য আসলে কিছুর দরকার হয়নি। আমি লেগেছিলাম, হয়ে গেছে। সেভাবে স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকতে হবে।’
গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্সের ফারজানা চৌধুরীর কাছে ইডেন কলেজের এক ছাত্রী জানতে চান, সফল উদ্যোক্তা কীভাবে হতে পারি?
এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যবসায় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সফল উদ্যোক্তা হতে স্বপ্ন থাকতে হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। চ্যালেঞ্জিং কাজে বাধা আসে, সে বাধা টপকানোর মনোবৃত্তি ও অধ্যবসায় থাকতে হবে। আমাদের সময়ে তথ্য পাওয়া কষ্টকর হলেও এখন প্রযুক্তির বিকাশে অনেক সহজে পাওয়া যায়। তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং বড়দের কাছ থেকে শেখার আগ্রহ থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিজের উপর বিশ্বাস রাখ। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হও। দেশ ও মা-মাটিকে ভালোবাস। এই লাল-সবুজের বাংলাদেশের বদন মলিন হলে তোমাদের নয়ন যেন জলে ভাসে।
উত্তরদাতা অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালিদ, সঙ্গীতশিল্পী নকিব খান, গ্রীন ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী ও এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত।
এর আগে বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে ২৫ বছর পূর্তির দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খানসহ অন্যান্য অতিথিরা। দিনব্যাপী আয়োজনে আরও ছিল ৩০টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ‘শিক্ষা ও উন্নয়ন মেলা।