বিদ্যালয় ঢেকে বালুর ব্যবসা, পাঠদান ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিদ্যালয়ের মাঠে রেখে খোদ প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ব্যবসা করছেন। প্রায় ১০ ফুট উঁচু বালুর ঢিবিতে ঢেকে গেছে মাঠ। এতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাফেরা ও খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। এ পরিস্থিতি জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় নান্দিনা মডেল একাডেমিতে।

সরজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির মাঠজুড়ে প্রায় ১০ ফুট উুঁচ বালুর ঢিবি। চারচালা টিনশেড ঘরের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে দাঁড়ালে মাঠের অন্য প্রান্তে বিজ্ঞান ভবন দেখা যায় না। আবার বিজ্ঞান ভবনের সামনে থেকে চারচালা টিনশেড ঘর দেখা যায় না। আর ওপর থেকে দেখলে মনে হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের বিশাল বালুর চর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরে মাঠে বালু রাখার কারণে তারা বদ্ধ পরিবেশে খুব কষ্টে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করে। উঁচু বালুর ঢিবির কারণে শ্রেণিকক্ষে স্বাভাবিক বাতাস ঢুকতে পারে না। ঢিবির সামনে জাতীয় পতাকা উঠালেও কয়েক মাস ধরে অ্যাসেমব্লি হয় না। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলাও করতে পারে না। সারা দিন শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ভটভটি, কখনো বড় ট্রাকে বালু তুলে নিয়ে যায় ক্রেতারা। ভটভটি ও ট্রাকের প্রচণ্ড শব্দে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিনষ্ট হয়। 

জানা গেছে, বিদ্যালয় মাঠে বর্তমানে যে পরিমাণ বালু আছে তা আগামী তিন মাসেও বিক্রি করে শেষ করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং অন্য শিক্ষকরাও প্রতিদিন এই বালু ব্যবসায় পালাক্রমে সময় দেন। শিক্ষকদের বালু ব্যবসায় এই ব্যস্ততার কারণে বিদ্যালয়ের ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক ভিপি মো. লুত্ফুল কবীর বাবু একজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তিনি জামালপুর সদর উপজেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনিসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই বালু ব্যবসায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি নিয়েই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ কমিটির সিদ্ধান্তেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু তুলে মাঠে রাখি। কিছু বালু আমাদের নতুন ভবন নির্মাণকাজে লাগছে। প্রতি ট্রাকে ২০০ ঘনফুট বালু ধরে। এক ট্রাক বালু বিক্রি করি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এর মধ্যে ৩০০ টাকা নেয় বালু শ্রমিকরা। বালু বিক্রির হিসাব খাতায় লিখে রাখি। একটি টাকাও নয়ছয় হওয়ার সুযোগ নেই। কয়েকজনের ব্যক্তিগত অনুদান ও বালু বিক্রির টাকাগুলো ভবনের কাজে ব্যয় করছি। ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের কিছু ঋণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অ্যাসেমব্লি হয় না কথাটা সঠিক নয়। বিদ্যালয়ের পাশেই সরকারি নান্দিনা মহারানী হেমন্ত কুমারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেই শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে।’

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. লুত্ফুল কবীর বাবু বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি নিয়েই বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু তুলে মাঠে রেখেছি। বিদ্যালয় মাঠে রাখা বালু বিক্রির টাকা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজেই লাগছে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

সদর উপজেলার ইউএনও ডা. মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চার-পাঁচ মাস আগে মাঠ সংস্কার ও ভবন নির্মাণকাজের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সামান্য কিছু বালু উত্তোলনের অনুমতি চায়। তখন তাদের মৌখিকভাবে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দিইনি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বালু ব্যবসা করা এবং এই কাজে বিদ্যালয় মাঠ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে শিগগির আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074019432067871