কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের একটি ভবনকে গেস্ট হাউজ বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সূত্র জানায়, পঞ্চাশ হাজার টাকায় শেয়ার নির্ধারণ করে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষকে কুয়াকাটা বি.বি গেস্ট হাউস নাম দিয়ে নিয়মিত সাধারণ পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
এসব কক্ষে নেই শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল। আছে খাট-বিছানা, টি-টেবিল, সোফা।
বিদ্যালয় ভবনে দীর্ঘদিন যাবত বেআইনি ব্যবসা চললেও উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
এই গেস্ট হাউস তৈরির অর্থ কোথা থেকে এসেছে, ভাড়া কোথায় যাচ্ছে কিংবা কে কি খাতে ব্যয় করছেন এর সঠিক কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয়ভাবে জানা যায়, শিক্ষকরা নিজেরাই ৫০ হাজার টাকা করে শেয়ার নির্ধারণ করে, শ্রেণিকক্ষকে গেস্ট হাউসে রূপান্তরিত করেছেন। সেই শেয়ার মোতাবেক আদায় করা ভাড়া ভাগ করে নেন তারা।
এতোদিন এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা ছিল না।
তবে রোববার (৯ জুলাই) রাতে কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের ৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কাওছার বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। আর এ থেকেই পুরো বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।
সৈয়দ মোহাম্মদ কাওসার ফেসবুকে লেখেন, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় কুয়াকাটা পৌরসভার একমাত্র হাইস্কুল। রোববার ঈদের ছুটির পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। কিন্তু আজ (রোববার) বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখলাম কয়েকজন পর্যটক শিক্ষার্থীদের সামনে ধূমপান করছেন। বিষয়টি লক্ষ্য করার পরে জানতে চাইলে তারা বললেন, আমরা ঘুরতে এসেছি ভাড়া নিয়ে থাকছি এখানে। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
তিনি আরও লেখেন, অনেক দিন আগে থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি ভবনকে আবাসিক হোটেলে পরিণত করেছে এবং সেটাকে প্রতিদিন ভাড়া দিচ্ছে। খারাপ লাগার বিষয় হচ্ছে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বহিরাগত আসছে। এতে শিক্ষার্থীরা বিব্রত হচ্ছে।
এদিকে ওই বিদ্যালয়ে কক্ষ ভাড়া নেওয়া পর্যটকদের সঙ্গে কথপোকথনে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের এক স্টাফ তাদের ডেকে এনে ভাড়া দিয়েছেন। এবং তাদের যে কক্ষে ওঠানো হয়েছে তার চাবির রিংয়ে কুয়াকাটা বি.বি. গেস্ট হাউস লেখা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, মূলত বিভিন্ন সময় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তা কুয়াকাটায় আসেন। তাদের জন্য অনেক সময় রুম পাওয়া যায় না। সে কারণে গেস্ট হাউস হিসেবে কয়েকটি রুম করা হয়েছে। এগুলো কখনও সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হয় না।
এছাড়া তিনি দাবি করেন, বিদ্যালয়টির মোট চারটি কক্ষকে গেস্ট হাউস বানানো হয়েছে, যার দুটি কক্ষে দুজন শিক্ষক নিয়মিত থাকছেন এবং দুটি কক্ষে অতিথিরা এলে থাকেন।
একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষকে গেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহার করার কোনো আইনগত ভিত্তি আছে কিনা প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এমনটি হয়ে থাকলে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।