বিনামূল্যের বই পেতে ফি দিতে হচ্ছে স্কুলগুলোতে

নাটোর প্রতিনিধি |

নাটোরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি বিনা মূল্যের বই বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের সেশন ফি ও বেতনের টাকা পরিশোধ করে বই নিতে বাধ্য করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। যারা টাকা পরিশোধ করতে পারছে না তাদের ভাগ্যে জুটছে না নতুন বই। শনিবার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে অভিযোগের প্রমান মিলেছে।আর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি স্বীকার করেছে।

নাটোর শহরতলির বড় হরিশপুর শের-ই-বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্ররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সেশন ফি ও বেতনের টাকা পরিশোধ করছে। এরপর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত নতুন বই। কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭০১। এর মধ্যে সেশন ফি পরিশোধসাপেক্ষে ৩৬৬ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম দিনে নতুন বই দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন গতকালও সেশন ফি প্রদানসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করতে দেখা যায়।

বড় হরিশপুর শের-ই-বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই সাংবাদিকদের জানান, অনেক ছাত্রছাত্রী বই পেয়ে আর স্কুলে আসে না এবং মাসিক বেতন ও সেশান ফি দেয় না। সে জন্য বই দেওয়ার আগেই তাদের কাছ থেকে ফিগুলো আদায় করা হয়। এটা সরকারি বিধিসম্মত কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিধিসম্মত না হলেও বিদ্যালয়ের স্বার্থে কর্তৃপক্ষ এ নিয়ম করতে বাধ্য হয়েছে।

নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি। নতুন বছরের প্রথম দিনে বই হাতে পায়নি সে। ১ থেকে ৩ ক্লাসরোলধারী ছাড়া তার শ্রেণির বাকি শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জোটেনি নতুন বই। তাই অন্যদের মতোই ভীষণ মন খারাপ বৃষ্টির। আরেক শিক্ষার্থী মামুনের দরিদ্র বাবা বিদ্যালয় নির্ধারিত ১৭০ টাকা ফি জোগাড় করতে পারেনি বলে বই পায়নি সে। মামুন জানায়, বিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে, টাকা পরিশোধ না করলে বই দেওয়া হবে না। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, বই নিতে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। সেশন চার্জ বাবদ ১৭০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তবে এই টাকা দিতে না পারলে বই দেওয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নাটোরের চন্দ্রকলা এসআই উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি বাবদ ছাত্রপ্রতি ৫০০ টাকা আদায় করে বই দিচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়টির ছাত্রছাত্রীরা জানায়, টাকা পরিশোধ না করলে বই দিচ্ছেন না শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজিনা বেগম জানান, বিধান অনুযায়ী তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাবদ ২০০ ও সেশন বাবদ ৩০০ টাকা হারে আদায় করছেন।

এ বিষয়ে নাটোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মকসেদুল ইসলাম জানান, সব বই শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বই বিতরণের সময় সেশন, বেতন বা অন্য কোনো অজুহাতে টাকা নেওয়া যাবে না। কোনো বিদ্যালয় বই বিতরণের সময় কোনো অজুহাতে টাকা দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভর্তি ফি বাবদ কোনো টাকা আদায় করা যাবে না বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান জানান, সরকার বিনা পয়সায় বই বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীকেই বই দিতে হবে। সেশন চার্জ বা মাসিক বেতন না দিলে বই পাবে না—এমন কোনো নিয়ম নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026609897613525