বিবর্তন তত্ত্ব পড়ানোয় প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলেন শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সম্প্রতি পাকিস্তানে এক কলেজ শিক্ষককে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে ইসলামি আইনের বিরোধী বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে বাধ্য করেন আলেমরা৷ এই ঘটনায় পাকিস্তানের শিক্ষাবিদেরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন৷

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পেসিস' বিবর্তন তত্ত্ব উল্লেখ করেন৷ সময়ের সাথে সাথে প্রাণীরা প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা এই তত্ত্বে দেখানো হয়েছে৷

এ মাসে শুরুর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখা রাজ্যের বান্নুতে অবস্থিত গভর্নমেন্ট পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের প্রাণিবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক শের আলি ইসলাম নারীর অধিকার নিয়ে একটি বক্তব্য রাখেন৷ নারীরা প্রকাশ্যে ইসলামি পোশাক পরছেন না, এই অভিযোগে স্থানীয়ভাবে বিক্ষোভ হওয়ার পর ঐ বক্তব্য দিয়েছিলেন শের আলি৷

এরপর আলেমরা তার বিরুদ্ধে ব্যাভিচার ছড়ানো ও ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ তোলেন৷ তিনি শুধু বক্তব্যেই নয়, শ্রেণিকক্ষেও এমন করেন বলে তাদের অভিযোগ৷

জবাবে আলি বলেন, জীববিজ্ঞান পাঠদানের অংশ হিসেবে তিনি ডারউইনের তত্ত্ব পড়িয়েছেন এবং এটি তার চাকরির অংশ৷

পাকিস্তানের হিউম্যান রাইটস কমিশনের বান্নু শাখার সদস্য রফিউল্লাহ খান বলেন, আলি সামাজিক মাধ্যমে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন৷ ‘‘আলি বলেন, যারা ডারউইনের তত্ত্ব পড়ানোয় তার সমালোচনা করছেন তাদের উচিত আদালতে যাওয়া এবং এটিকে অবৈধ ঘোষণার রায় নিয়ে আসা৷ তিনি বলেন, এটি পড়ানো তার দায়িত্ব এবং এজন্য সরকারের কাছ থেকে টাকা পান তিনি,'' বলেন খান৷

কিন্তু গত সপ্তাহে আলিকে তার বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়৷

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আলেম পরিবেষ্টিত হয়ে আলি একটি বিবৃতি পড়ে শোনাচ্ছেন৷ আলি বলেন, শরিয়া বা ইসলামি আইন এবং আল্লাহর আদেশের বিরোধী সব বৈজ্ঞানিক মতবাদ, যার মধ্যে ডারউইনের তত্ত্বও আছে, সেগুলোকে তিনি মিথ্যা বলে বিবেচনা করেন৷ ‘‘শরিয়া অনুযায়ী নারীদের বুদ্ধিমত্তা পুরুষদের চেয়ে কম,'' বলে ভিডিওতে আলিকে মন্তব্য করতে দেখা গেছে৷

এরপর আলি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে এটাই আমার শেষ কথা এবং আমি বিশ্বাস করি, নারীদের মাথা থেকে পা ঢাকা পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া উচিত৷ শুধু প্রয়োজন হলেই নারীদের বের হওয়া উচিত৷'' ভিডিওর একটি কপি ডয়চে ভেলের কাছে আছে৷

প্রতিক্রিয়া

পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফয়জুল্লাহ জান মনে করছেন, শুধু ডারউইনের তত্ত্ব নয়, ভবিষ্যতে হয়ত আরও কিছু বিষয় পড়ানো যাবে না৷ তিনি বলেন, নারীবাদ বিষয়ে পড়ানো অনুৎসাহিত করতে সরকার সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে৷ ‘‘এতে বলা হয়েছে, নাস্তিকতা ও নারীবাদের আতঙ্ক পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে, যা পাকিস্তানি সমাজের নৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করছে,'' বলেন অধ্যাপক জান৷

তিনি বলেন, ‘‘আজ তারা শিক্ষকদের ডারউইনের তত্ত্ব পড়াতে বাধা দিচ্ছে৷ আগামীকাল তারা শিক্ষকদের বলবে পিতৃতন্ত্রের নেতিবাচক দিকগুলি না পড়াতে, এবং তারপর … অন্যান্য বিষয়ও আসবে৷''

অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, আলেমদের প্রভাব শুধু কিছু অঞ্চল বা রাজ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি পুরো পাকিস্তান ও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷

এ বছরের শুরুতে ভারতের পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক ডিজাইন করা সরকারি সংস্থা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং' যে বিষয়গুলো পড়ানো হবে না, তার তালিকায় ডারউইনের তত্ত্ব অন্তর্ভুক্ত করেছে৷

ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল হামিদ নায়ার বলেন, শিক্ষায় এই ধরনের পরিবর্তন ১৯৮০-র দশকে গতি পেয়েছিল৷

রসায়নে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হত যে, যখন অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন মিশ্রিত হয় তখন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানিতে পরিণত হয় না৷ ‘‘তাদের বলা হত, আল্লাহর ইচ্ছায় তা পানিতে পরিণত হয়,'' জানান নায়ার৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026161670684814