দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : দীর্ঘ নয় বছর পর আজ স্বাধীনতা দিবসে চালু হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-রোম ফ্লাইট। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটায় ঢাকা ছেড়ে যাবে এই ফ্লাইট। এটি বিমানের ২৩তম রুট। বহুল প্রতীক্ষিত এ ফ্লাইট চালুর খবরে আনন্দের বন্যা প্রবাসীদের মাঝে। তবে তারা আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী সেবা চান।
বিমান জানিয়েছে, আজ রাত সাড়ে ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্লাইটের ফিতা কাটা হবে। অত্যাধুনিক ড্রিমলাইন উড়োজাহাজ দিয়ে এই ফ্লাইট অপারেট করা হবে। উদ্বোধনী ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রোমগামী মোট যাত্রীর সংখ্যা ২১৬ জন। ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রী রয়েছেন ২৫৭ জন।
রোম পর্যন্ত ইকোনমি ক্লাসে সর্বনিম্ন একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার টাকা আর দ্বিমুখী ১ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বিমানের ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিমানের মোট ৩১টি রুট চালু ছিল। তখন বেশিরভাগ উড়োজাহাজ ছিল ভাড়ার। এখন বিমানে ১৬টি বোয়িংসহ ২১টি নতুন উড়োজাহাজ রয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে বিমানের নতুন রুটও চালু করা হচ্ছে।
বিমান গত তিন বছরে ঢাকা থেকে টরন্টো, নারিতা, গুয়াংজু চেন্নাই রুটে ফ্লাইট চালু করেছে। অদূর ভবিষ্যতে কোড শেয়ারের মাধ্যমে লজঅ্যাঞ্জেলস, ভ্যাংকুভার, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ায় ফ্লাইট চালুর জোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
লোকসানের কারণে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এই রুটটি বন্ধ করে দেয় বিমান। এবার বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম। আপাতত সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে সোম মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার।
এদিকে দীর্ঘ দাবির মুখে এ ফ্লাইট চালু হওয়ায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে প্রবাসীদের মাঝে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা বলছেন, এটি হবে বিমানের অন্যতম লাভজনক রুট। ইতালির রাজধানী রোমসহ মিলান, ভেনিসে বসবাস করছে কমপক্ষে ২ লাখ বাংলাদেশী, এর বাইরে বছরজুড়ে দেশটিতে যাচ্ছেন হাজারো বাংলাদেশী পর্যটক। ইতালি তো বটেই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। এতদিন ভরসা ছিল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্সগুলো।
এতে করে ট্রানজিট নিয়ে ১৫-১৬ ঘণ্টা লেগে যেত ইতালি পৌঁছাতে। এখন লাগবে দশ ঘণ্টারও কম। এ বিষয়ে এক বাংলাদেশী বলেন, ‘সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা যেন আসন ও যাত্রীসেবা পাই এবং সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট পাই। বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যে বিমানের এই ফ্লাইটটি যোগাযোগ ও অর্থনীতিসহ নানা খাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে আশা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর। এ সম্পর্কে একজন ব্যবসায়ী বলেন, রোম-ঢাকা রুট শুধু যে বাংলাদেশীদের জন্য ইতিবাচক তাই নয়, এটি ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি তৈরি করবে। আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য এটি অনেক বড় একটি মাইলফলক।
এ ফ্লাইটটিকে এই রুটে লাভবান করতে আন্তর্জাতিক মানের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশের (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ডিরেক্টর মোহাম্মেদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যাত্রী সেবা উন্নত না করতে পারলে আমরা ব্যবসায় টিকতে পারব না। আমরা ন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, আমাদের কমিটমেন্ট আছে। আমরা যাত্রীদের জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করব।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল রোমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইট চালু হয়। নানা কারণে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল তা বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ফ্লাইট চালু উপলক্ষে পরিচালক সালাহ উদ্দিন রোম পরিদর্শনে গিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, বাংলাদেশ বিমানকে ইউরোপের ট্রাফিক পয়েন্ট হিসেবে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। বাংলাদেশ বিমান যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করে সঠিক সময়ে চলাচল করবে এ রুটে।
বিশেষ আমন্ত্রণে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব, ইতালির সভাপতি আফজাল হোসেন রোমান, সাধারণ সম্পাদক এমডি রিয়াজ হোসেন, সদ্য প্রাক্তন সভাপতি খলিল কাওসার শাহিন, যুগ্ম সম্পাদক শিমুল রহমান, প্রচার সম্পাদক সজীব আহমেদ রিয়ন ও সদস্য হাসান মাহমুদ। বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই রুটে বিমান চালু হচ্ছে।
ডিস্টালের কার্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমানের ম্যানেজার কমার্শিয়াল প্রিচিং রেজাউল হক, এজেন্সি ইন্টারলাইন ম্যানেজার শফিউদ্দিন আহমেদ, ডিস্টালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিসকো ভেনিজুয়েনা সিইও ফ্রান্সিসকো স্গামবেল্লুরি ও সিএসবি ট্রাভেলসের কর্ণধার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদ বাবুসহ অনেকে।