বিরল স্নায়ু রোগ মোটর নিউরন ডিজিজে (এমএনডি) ভুগছেন নিরঞ্জন ঘোষ। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাথরাজ সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান ল্যাবের অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে ৩৭ বছর চাকরি শেষে গত বছরের শুরুতে অবসরে গিয়েছেন তিনি। অবসরগ্রহণের পরপরই এমএনডি হানা দেয় তার শরীরে।
সরকারিকৃত কলেজটির বেসরকারি আমল থেকে কর্মরত এ কর্মচারীর শেষ জীবনের ভরসা ছিলো অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা। তবে প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়ে যাওয়ায় অবসর সুবিধার টাকার আশা ছেড়েছেন। শেষ সম্বল কল্যাণ ট্রাস্টের টাকাও পাচ্ছেন না তিনি। এমএনডি আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী নিরঞ্জন শেষ জীবনে নিজ বেতন থেকে জমানো কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা হাতে নিতে চান।
নিরঞ্জন ঘোষের পরিবারের সদস্যরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে পাথরাজ সরকারি কলেজে যোগদান করেছিলেন। দীর্ঘ ৩৭ বছরের কর্মজীবন শেষে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার কিছু দিন পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে চিকিৎসা দেয়া হয় কিছু দিন। এরপর ভারতে নিউট্রিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে ধরা পড়ে এমএনডি। তিনি দীর্ঘ নয় মাস ধরে নিজ বাড়িতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। ব্যয়বহুল চিকিৎসায় পরিবারের সঞ্চয়ও শেষ। এ পরিস্থিতিতে বেতন থেকে জমানো কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা প্রয়োজন নিরঞ্জনকে বাঁচাতে। এমএনডি আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না, খেতে পারেন না, এমনকি ঘুমাতেও পারেন না।
তার বড় ছেলে বোদা সরকারি পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের রসায়নের প্রভাষক ক্ষিতীশ চন্দ্র ঘোষ দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বাবা কাগজে লিখে জানতে চান, তার বেতন থেকে জমানো কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা তিনি পাবেন কি-না। আমরা দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে আসছি । সর্বশেষ ভারতের নিউট্রিয়া হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী এমএনডি ধরা পড়ে। ডাক্তারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই । বাবার শেষ চাওয়া অবসর জীবনে কল্যাণ ট্রাস্টে জমানো টাকাটুকু হাতে পাওয়া।
তিনি আরো বলেন, গতবছরের জুলাই মাসে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাওয়ার আবেদন করেছি (ইনডেস্ক নং- 604702 আবেদন নং-C-869910284)। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বহুবার ঢাকায় গিয়েছি। সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর সুপারিশ পত্র নিয়ে জমা দিয়েছি। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট অফিসে গিয়েছি। সচিবের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে গেলেও দেখা হয়নি। সন্তান হিসেবে বাবার ইচ্ছাটুকু পূরণ করতে পারবো কি না জানি না।
জানা গেছে, এমএনডিতে আক্রান্তদের মস্তিষ্ক থেকে পেশি পর্যন্ত ব্রেইনের কোনো কমান্ড পৌঁছানোর প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চলাচল ও কথা বলা বাধাগ্রস্ত হয়। স্থায়ী পক্ষাঘাত দেখা দিতে পারে। এমনকি আক্রান্তদের নিশ্বাস নিতেও সমস্যা দেখা দেয়। জন্মসূত্রে পাওয়া জিনগত মিশ্রণ এ রোগের অন্যতম কারণ ধরা হয়।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।