বিল গেটসকে ছেড়ে বাংলাদেশে নোবেল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

তুমি যদি নতুন কোনো আইডিয়া করো। তবে এখনই তা কাজে রূপান্তর করো। না হলে আইডিয়াটি অন্যের হয়ে যাবে; কথাটি বিল গেটসের। মাইক্রোসফটের জনক বিল গেটসের কথা কে না জানে? দুনিয়াজুড়ে যার খ্যাতি তার এ কথার বাস্তবে রূপ দিলেন তারই কর্মী নোবেল। পুরো নাম নোবেল খন্দকার। তার স্বপ্ন একটা নতুন কিছু করা। দেশের জন্য কিছু করা। নিজ অভিজ্ঞতার বিনিময়ে তরুণদের জন্য নতুন প্লাটফরম তৈরি করা। শনিবার (৫ অক্টোবর) মানবজমিন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন কাজল ঘোষ।

এমন চিন্তা থেকেই বিল গেটস-এর প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ছাড়লেন তিনি। পাড়ি জমালেন নিজ দেশে। প্রিয় বাংলাদেশে।

দেশে যখন অগুনতি সমস্যা, তীব্র যানজট, পরিবেশের বেহাল অবস্থা, আমলাতান্ত্রিকতা, দক্ষকর্মীর অভাব, দেশের অনেক কিছুই এখনো এনালগ, সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতি, শিক্ষা আর স্বাস্থ্য দুই-ই নিম্নমানের। সব প্রতিকূল অবস্থার ফর্দ নোবেলের টেবিলে। অন্যদিকে, বিশ্বনন্দিত প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের হাতছানি। যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। দিনে দিনে আয়ত্ত বাড়বে। সঙ্গে আনুষঙ্গিক সুবিধাও। কিন্তু মাথায় একটিই ভাবনা।

দেশের জন্য কিছু করতে চাই। স্ত্রী-সন্তান, পরিবারের নিরাপত্তা সব ছাপিয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্যই নোবেলকে নিয়ে আসার তাড়না দিলো দেশের মাটিতে। সিদ্ধান্ত নিলেন আর নয়। মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষকে জানালেন। ফিরতে চান নিজ দেশে। প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তা সব শুনে বললেন, নোবেল তোমার অবদান ভোলার নয়। দরজা খোলা সব সময়। যখন চাইবে চলে আসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় অনার্স করে নোবেল পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। লক্ষ্য উচ্চতর শিক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা ইউনিভার্সিটি থেকে করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। তারপর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে করেন পিএইচডি। অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

নেব্রাস্কা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ই কাজ শুরু করেন অ্যাপলিকেশন ডেভেলপার হিসেবে। কাজ করেন ‘কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড হিউম্যান সায়েন্স’ প্রজেক্টে। যার মাধ্যমে একটি অনলাইন সার্ভে টুল ডিজাইন করেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের মেধাস্তর মনিটর করে বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি প্রথম সাফল্য হিসেবে নোবেলের অর্জন তালিকায় যুক্ত হয়। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট রিসার্স অ্যাসিসটেন্স হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কাজ শুরু করেন। ‘সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ইন টেস্ট’ পদে মাইক্রোসফটে যোগ দেন ২০১১ সালে। প্রথম কাজ ছিল ‘এক্সচেঞ্জ কমপ্ল্যাইয়েন্স টিম’ নিয়ে। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা ও কাজের সমন্বয়ে এগিয়ে যান নোবেল খন্দকার। ২০১৩-তে পদায়ন ঘটে। মাইক্রোসফটে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ শুরু করেন। মূল দায়িত্ব ছিল ‘ইনফরমেশন প্রটোকল টিম’ নিয়ে কাজ করা।

২০১৮-তে ‘লিড সিনিয়র সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার’ পদে আসীন হন। বর্তমানে তার নেতৃত্বে তৈরি সফটওয়্যার ডাটা লস প্রিভেনশনে অর্থাৎ কোনো কেম্পানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে তা বন্ধে কাজ করে এই সফটওয়্যার। এই অ্যাপসটি হ্যাকিং আতঙ্কে এই সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তথ্যের সুরক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। যা সকল মহলে প্রশংসিত। বিশ্ব প্রযুক্তির জায়ান্ট সংস্থা মাইক্রোসফটে কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন স্বীকৃতিও। স্পেশাল এমপ্লয়ি স্টক অ্যাওয়ার্ড, টপ টুয়েন্টি ইমার্জিং এ আই অ্যাপলিকেশন, মাইক্রোসফট কোলাবরেটিভ রিসার্স প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন নোবেল। মাইক্রোসফটের সবশেষ লিড সিনিয়র সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করার সময়ই নোবেল সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফেরার। ১০ই সেপ্টেম্বর ফেরেন দেশে। যোগ দেন সহজ ডটকমে ভাইস প্রেসিডেন্ট (টেকনোলজি) পদে।

নোবেল খন্দকার বলেন, আট বছর দেশের বাইরে থেকে পৃথিবীর সেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। অনেক নোবেল বিজয়ীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতায় যদি দেশের একশ’ ছেলেমেয়েকেও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারি তাহলেই আমার দেশে ফেরা সার্থক। তিনি বলেন, আমাদের মতো দেশে অনেক ধরনের নাগরিক সুবিধার ঘাটতি আছে, দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান নেই। প্রযুক্তি এসব সমস্যার সমাধানে তথ্যগত বা থিওরিটিক্যাল কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করেছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এর ব্যবহারিক দিক নিয়ে কাজ করা। ফিজিক্স আর ইনফরমেশন টেকনোলজির সমন্বয়ে অর্থাৎ পদার্থবিদ্যা ও প্রযুক্তিবিদ্যার সমন্বয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে একেবারেই উন্মুক্ত, কাজেই এ সেক্টরে অনেক কিছু করার আছে। এটাই আমার বিশ্বাস- যোগ করেন নোবেল।

নোবেল বলেন, আগামী পৃথিবীকে বলা হচ্ছে- ‘Inovation t the edge of sciences.’ আর সে লক্ষ্য নিয়েই তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে, দেশের সমস্যা সমাধানে ইনোভেটিভ কিছু করা। নোবেল শেষ করেন এই বলে, স্যার উইনস্টন চার্চিল বলেছেন, দেশপ্রেমের সংজ্ঞা হলো নিজের কাজ ঠিকমতো করা। আর দেশপ্রেমের চেতনায় আমি আমার কাজটিই করতে চাই।

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে বেড়ে ওঠা নোবেল খন্দকারের মাতা মিতালী হোসেন ভ্রমণ লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত। একজন সমাজকর্মীও। পিতা মোজাম্মেল খন্দকার ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ প্রধান। একমাত্র বোন মৌটুসী খন্দকার নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষকতায় যুক্ত। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী তিশা খন্দকার, পুত্র-কন্যা দানিয়েল ও ইনারাকে নিয়ে সুখী পরিবার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055081844329834