বিশৃঙ্খলার মূল্য কতো

এম এ মতিন |

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলনে নামেন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুনে। ওই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের অধিবশনে সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে যখন এতো আন্দোলন তখন চাকরিতে কোনো কোটাই থাকবে না। সংসদ কার্যবিবরণীতে তার ওই বক্তব্য রেকর্ড হয় এবং তার ভিত্তিতে ‘সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান সব কোটা বাতিল করা হয়। পরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের আন্দোলনে বিরক্ত হয়ে অমন মন্তব্য করেছিলেন। যদিও শপথ অনুযায়ী কোনো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি অনুরাগ কিংবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। 

ওই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হয় এবং তৎপরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট উক্ত নির্বাহী আদেশ স্থগিত করে কোটার পূর্বাবস্থা বহাল রাখেন। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার তানিয়া আমির অবশ্য বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে যে মামলাটি হাইকোর্ট নিলেন তা আইনানুগ ছিলো না। কেনোনা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কিংবা নিবন্ধিত কোনো গ্রুপ ছাড়া অন্য কারো মামলা করার এখতিয়ার নেই। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার অন্দোলনের পূর্ব পর্যন্ত কোটা বাতিলের নির্বাহী আদেশ স্থগিতের পূর্ণাঙ্গ প্রকাশিত হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জানা যায় যে, হাইকোর্ট নির্বাহী আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি এও মন্তব্য করেন যে, ‘…নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন বোধ করলে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করতে পারবেন’। সমস্যা তৈরি হয়েছে কোটা সংস্কার ও এর বাস্তবায়ন নিয়ে। কোনো আদেশই চিরস্থায়ী নয়, সময়ের ব্যপ্ত পরিসরে ও প্রয়োজনে সবকিছুই পরিবর্তনযোগ্য। পরিবর্তনই উন্নয়ন।

ধরে নিলাম, ছাত্ররা কারো ইন্ধনে দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষে এই আন্দোলনে নেমেছে। অবস্থা দৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে দায়িত্বশীলদের কাজ কী ছিলো? অবস্থা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে তা বিশ্লেষণ করা ও ত্বরিত করণীয় ঠিক করে পরিস্থিত নিজেদের আয়ত্তে আনা। কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেলো তা এর বিপরীত। এখন হাইকোর্ট যদি নির্বাহী বিভাগকে জিজ্ঞেস করে, ‘আমরা তো বলেছিলাম, প্রয়োজনে নির্বাহী বিভাগ কোটা সংস্কার করতে পারবে। ছাত্রদের দাবিওও ছিলো ঠিক তাই। আপনারা (নির্বাহী বিভাগ) তা করতে ব্যর্থ হলেন কেনো’? আপনাদের ব্যর্থতার কারণেই কি দেশে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি’? যে বিশৃঙ্খলার শুধু আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাক। এই আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতো হতে পারে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে সেশন জ্যাম তৈরি হবে তার আর্থিক মূল্য নিরূপণ করা কি আদৌ সম্ভব। হাল আমলের আলোচিত ও সাধারণ মানুষের হৃদয় নাড়া দেয়া ঘটনা আরো রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে–বেনজির-মতিউর এর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল অবৈধ সম্পদ উপার্জন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পিয়নের অবৈধ অর্জিত ৪০০ কোটি টাকার সন্ধান ও তার হেলিকাপ্টারে যাতায়ত, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন’র (পিএসসি) গাড়িচালক আবেদ আলির নেতৃত্বে বিসিএস এর প্রশ্নপত্র ফাঁস ও এর মাধ্যমে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের চাকরির সন্ধান এবং সর্বোপরি দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার এর কাহিনি।  ঘটনাগুলোকে বিশৃঙ্খলা বলি কিংবা ছাত্র আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ বলি, বিরোধী রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র বলি কিংবা সরকার উৎখাতের পাঁয়তারা, যাই বলি না কেনো–এর ফলে সংঘটিত অভূতপূর্ব বিপুল প্রাণহানি, মূল্যবান স্থাপনার বিনাশ, অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড বন্ধসহ পুরোদেশ স্তব্ধ হয়ে যাওয়া বিশৃঙ্খলারই নামান্তর। 

সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা যখন শিথিল হয়ে আসে, সামাজিক মূল্যবোধ ভেঙে পড়ে, মানুষ যখন নিজের অধিকারহীনতা অনুভব করে, অস্থিরতা বোধ করে তখনই সমাজ আবর্তিত ও অস্থির  হয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সামাজিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে একটা আন্তসম্পর্ক থাকে। একটা সম্পর্ক আর একটি সমস্যার জন্ম দেয় যা জটিল সমাজের অস্বাভাবিক অবস্থার বিমূর্ত ধারণা। এর পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক, জৈবিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক কারণসহ আরো নানা অনুসঙ্গ। সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব এবং ফলত সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সমাজের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে পরিবার। পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেও সামাজিক সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়া দুর্নীতির বিস্তার, সম্পদ ও সুযোগের অসম বণ্টন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা ও সুশাসনের অভাব নানাভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে বৃদ্ধি পায় সামাজিক সমস্যা তথা বিশৃঙ্খলা। 

গত ১৯ জুলাই সকালে ঢাকাবাসী এক অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করলো, যা আগে কখনো ঘটেনি। তারা দেখলো কারো আঙিনাতে পানি, কারো ঘরে পানি, আশেপাশের রাস্তা পানিতে ডুবন্ত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওইদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। এরপরও তা ভারী বৃষ্টি ছিলো না। কিন্তু তাতেই ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, নিউমার্কেট, মতিঝিল, আরামবাগ, কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, বিজয় সরণি, মালিবাগ, মৌচাকসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকর সড়ক ডুবে যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে বিগত ৪ বছরে ঢাকা সিটি করপোরেশন ৩৬০ কোটি টাকা (দক্ষিণ) ও ৩৭০ কোটি (উত্তর) খরচ করেছে। যার সুফল নগরবাসী ১৯ জুলাই উপভোগ করলো। তারা অবশ্য এ জন্যে শহরের ড্রেন, খাল ও নর্দমাগুলোতে নির্বিচারে পলিথিন জাতীয় বর্জ ফেলাকে দায়ী করেছেন। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এ জন্যে দুই সিটি করপোরেশন এর গৃহীত ব্যবস্থা কী এবং কী কারণে তা কাজ করেনি? পরিবেশ দূষণের জন্যে পলিথিনকে দায়ী করা হলেও এর প্রতিকার চোখে পড়ে না। 

ঢাকা শহরের জলবদ্ধতার এই অবস্থাকে ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে? আর এর কি কোনো আর্থিক মূল্য নেই? পলিথিন জাতীয় পদার্থ ফেলে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই যদি এই জলাবদ্ধতা–তা হলে এর প্রতিকার প্রয়োজন। পলিথিন উৎপাদন তো এক সময় সরকার বন্ধ করেছিলে বলে জানি। এই সরকার পলিথিন উৎপাদনের অনুমোদন দেয়নি তাও জানি। তাহলে বাজারে পলিথিন আসে কীভাবে? আর যত্রতত্র পলিথিন না ফেলার যে শিক্ষা তা সাধারণ মানুষকে দেয়ার দায়িত্ব কার? 

নিরাপদ সড়ক যাত্রা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ঢাকা শহরের রাস্তায় এই অধিকার নিয়ে চলা ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রছাত্রীদের  নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ঢাকায় ২৯ জুলাই ২০১৮ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হযন ও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হযন। এই সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠিদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল ও যাত্রীবান্ধব হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কিংবা এমন আন্দোলনের প্রয়োজন হতো বলে মনে হয় না। 

নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘট দিয়ে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার চেষ্টা বাস ও লঞ্চ মালিকদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। কারণ, এসব সমিতিগুলোতে রাজনৈতিক নেতাদেরই আধিপত্য। একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ঢাকার বাস চলাচল। এ চক্র ভাঙতে না পারলে সড়কে শৃঙ্খলা আনা কঠিন হবে। ঢাকার দুই মেয়র চেষ্টা করছেন কিছুটা। তারা সফল হলে বোঝা যাবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কি না। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এমটিএস চালুর পদক্ষেপ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। বাস মালিকদের তিনি আনেকটাই এমটিএস এর পক্ষে আনতে পেরেছিলেন। নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল এমটিএস এর অনুপস্থিতিতে রাজধানী শহরসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে সৃষ্টি হয় অযাচিত ও অভূতপূর্ব যান জট। এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বুয়েট, এর তথ্যানুসারে বছর কয়েক আগে ঢাকা শহরে যেখানে গাড়ির গতি ছিলো ঘণ্টায় ২০ কিমি সেখানে বর্তমানে তা ৫ কিমি এ নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে করে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পুরছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। 

রাস্তায় বিশৃঙ্খলার আরেক নাম মোটরসাইকেল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। আর বেসরকারি রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে যতো দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার ৩৯ শতাংশই মোটরসাইকেলের কারণে হয়েছে। এর পেছনে অবৈধভাবে লাইসেন্স পাওয়া, লাইসেন্স ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া চালানো আর ঝূঁকিপূর্ণভাবে মোটরসাইকেল চালানোকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে ২ হাজার ৭৮টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২১৪ জনের। লক্ষ্যণীয়,  ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বেড়েছে ৫০ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৫১ শতাংশ। নিহতদের বেশিরভাগের বয়স ৩০ বছরের নিচে।

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম তালুকদার বলছেন, মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে না দেয়া, সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর লাইসেন্স দেয়া, প্রয়োজন যাচাই করে মোটরসাইকেলের নিবন্ধনের বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু এখন তো বরং মোটরসাইকেল সবার জন্য সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে। সেখানে পরিবর্তন আনা না গেলে এভাবে বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু, হতাহত হওয়া বন্ধ হবে না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় উদীয়মান সম্ভাবনাময় তরুণদের অকাল মৃত্যুর আর্থিক মূল্য ও তাদের পরিবারের বেদনার মনস্ত্বাত্ত্বিক ক্ষতির মূল্য কতো আমাদের সে সম্পর্কে চিন্তা করা দরকার।

কোটা সংস্কার আন্দোলন, শিক্ষা, ঢাকা শহরের জলবদ্ধতা, রাস্তায় যানবাহন চলাচল, মোটর সাইকেলের দৌরাত্ন্য ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলার খন্ডচিত্র। এ ছাড়া অন্যান্য খাত–যেমন, বাজার ও দ্রব্যমূল্য, পরিবেশ ও জলবায়ু, ছাত্র ও জাতীয় রাজনীতি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরাজমান বিভিন্ন সূচকে সন্মানজনক স্থান অর্জন, ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা আমাদের উন্নয়নকে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে এবং দেশ ও জনগণকে এর মূল্য দিতে হচ্ছে।   

ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র এবং সকল রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল। শৃঙ্খলার শাব্দিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা অনুযায়ী ব্যক্তিকে হতে হবে মৌলিক মানবিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত, সুশিক্ষিত, আত্নসচেতন, নিজের, পরিবারের, সমাজের এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের প্রতি তাকে হতে হবে দায়িত্বশীল। এ সকল গুণাবলি অর্জনে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র তাকে সাহায্য করবে যথাযথভাবে গড়ে উঠার জন্যে। এ কাজে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র যতো সক্রিয় সেই রাষ্ট্রের মানুষ, সমাজ ততো শৃঙ্খল। 

নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকার ব্যক্তির অধিকার প্রদানে যথাযথ মনোযোগ দিচ্ছেন না। ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে এবং এর কুফল জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, সরকার যদি সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তির অধিকার প্রদানে সফল হয় তাহলে এর সুফল জনগণই ভোগ করে। সংবিধান যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং ব্যক্তি, সমাজ ও সরকার এটা মানতে বাধ্য। গোটা সমাজব্যবস্থা মার্জিত, পরিশীলিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গভীর মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। তাই সমাজকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করার জন্য প্রথমে দরকার পারিবারিক সুশিক্ষা। একই সঙ্গে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষ হিসেবে আমার যা কিছু কর্তব্য আছে সে সম্পর্কে চেতনার বিকাশ ও নিজের শক্তিকে উপলব্ধি করার চেতনা জাগ্রত করা। সুতরাং সমাজ ও রাষ্ট্রের সব অনিয়ম, অপশাসন, অন্যায়-অপরাধ, বিশৃঙ্খলার মূলোৎপাটন করতে হলে আমাদেরকে দেশের সর্বোচ্চ আইনের দিকে ফিরে যেতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের সর্বাত্নক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। 

লেখক: প্রক্টর, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল - dainik shiksha ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার, জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার - dainik shiksha শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার, জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার মাউশি কমকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে লিয়াকত-অহিদুর - dainik shiksha মাউশি কমকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে লিয়াকত-অহিদুর নবম-দশমের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আপলোডের নির্দেশ - dainik shiksha নবম-দশমের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আপলোডের নির্দেশ ক্ষমতায় গেলে ফরম থেকে কে কোন ধর্মের সেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে - dainik shiksha ক্ষমতায় গেলে ফরম থেকে কে কোন ধর্মের সেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে ডাকসুতে প্যানেল বাতিলসহ ৮দফা প্রস্তাবনা ইউআরআই‘র - dainik shiksha ডাকসুতে প্যানেল বাতিলসহ ৮দফা প্রস্তাবনা ইউআরআই‘র কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030131340026855