বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাবে সব সরকারি কলেজ: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি কলেজগুলোকে পুনরায় নিজ নিজ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যায় লাগাম টানতে বলেছেন। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে সরকারি কলেজগুলো নিজ নিজ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কলেজ ও শিক্ষার্থীর চাপ, ভিসি-প্রোভিসিদের দুনীতি, অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, সেশনজটসহ নানা কারণে দায়িত্ব পালনে বছরের পর বছর ধরে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে সরকারি কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার অনুশাসন দেন। 

কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নানা কৌশল করে আসছে। তারা ক্রাশ প্রোগামের নামে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার্থী বানিয়ে ফেলছে। দ্বৈত পরীক্ষক পদ্ধতি বাদ দিয়ে আত্মঘাতী একক পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করেছে। অবশেষে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার সাতটি কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তর করে। কিন্তু ফলাফলসহ নানা বিষয়ে ঝামেলা তৈরি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এসব কাজে সহায়তা করে নামধারী কতিপয় গণমাধ্যম। নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে রাস্তায় নামায় একটি চক্র। আবার ঢাবির শিবিরপন্থি শিক্ষার্থীদের দিয়ে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল দাবি করে মিছিল করায় একটি চক্র।    

জানা যায়, নতুন অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন শিরোনামের একটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় উঠে আসে সরকারি কলেজগুলোকে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার বিষয়টি। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একনেকে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নির্ধারণ করে দিতে বলেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ হাজার, ৬০ হাজার শিক্ষার্থী। উনি বলেছেন, এটা কীভাবে হতে পারে! এটা হয় নাকি কোথাও! শিক্ষার্থীরা আসছেই, ভর্তি হচ্ছেই, দে আর সুড বি লিমিট। শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ঠিক করবেন, কতজন শিক্ষার্থী হতে পারে। ছাত্র-ছাত্রী বাড়ানো যাবে না। আনলিমিটেড নাম্বার স্টুডেন্ট নট অ্যালাউড।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘যেসব নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আমরা বানাচ্ছি; আশা করি সুনামগঞ্জে নতুন একটা বিশ্ববিদ্যালয় হবে অচিরেই। ধরুন হলো, এর আওতায় যে কয়েকটি সরকারি কলেজ আছে, এর সঙ্গে অধিভুক্ত হবে। সরকারি কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়টির অংশ হয়ে যাবে। যেমন- ঢাকায় আছে (৭ কলেজ)। এটা সারাদেশেই করা হবে।’

শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এ বিষয়ে কাজ করবেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সভায় প্রধানমন্ত্রী গবেষণার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘শুধু দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় ভবন হয়। কিন্তু গবেষণা দেখি না।’ বড় বড় দালান নির্মাণের পাশাপাশি গবেষণার ওপর জোর দিতে বিশ্ববিদ্যালগুলোকে জোর তাগিদ দেন তিনি।

একনেক সভায় সাত হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হবে ছয় হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থ পাওয়া যাবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে।

আরও পড়ুন: 

‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শুধু পাস কোর্স থাকা উচিত’ (ভিডিও সাক্ষাৎকার)

‘সাত কলেজে পাসের হার কমলেও শিক্ষার মান বাড়ছে’

মাঠ, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার প্রচুর পরিমাণে করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভায় রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের মাঠ নিয়েও কথা হয়েছে একনেক বৈঠকে। এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো, তিতুমীর কলেজের মাঠ, মাঠই থাকবে। মাঠ যেন কেউ নিতে না পারে।’

সভায় অন্যদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026650428771973