বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা প্রত্যাখান করলেন শিক্ষকরা

ঢাবি প্রতিনিধি |

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল’ প্রত্যাখান করেছেন শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ওই নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ তিনটি শিক্ষক সংগঠন আলাদা বিবৃতিতে ওই নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত ‘অভিন্ন নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়মনীতি ও স্বায়ত্বশাসনে হস্তক্ষেপ করার একটি প্রেসক্রিপশন। এ নীতিমালা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও অধিকার সংকুচিত করার একটি অপপ্রয়াস।

এতে আরো বলা হয়, বাস্তবতা ও যুগের সাথে সম্পর্কহীন এ নীতিমালাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখান করছে এবং একইসাথে বিরাজমান নীতিমালা অব্যাহত রাখার পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করছে।

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৭ জুন ইউজিসির পাঠানো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল প্রতিপালনের নির্দেশকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রত্যাখ্যান করছে। এ ধরনের নীতিমালা প্রতিপালনের নির্দেশকে জবি শিক্ষক সমিতি মানহানিকর এবং ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করে। ইউজিসি প্রেরিত নীতিমালা দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে ধারণ করতে পারেনি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের বর্তমান বাজার-ব্যবস্থা ও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে এই নীতিমালা সাংঘর্ষিক। এই অভিন্ন নীতিমালা সরকারের উন্নয়ন ও অদম্য অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করছে এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা তৈরি করবে বলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মনে করে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত এই নীতিমালা আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মহুর্তে সরকার ও শিক্ষক সম্প্রদায়কে পরষ্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড় করানোর অপতৎপরতা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। মূদ্রাস্ফীতির সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে সবাই যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধির জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছে, তখনই সুবিধা আরো কর্তন করে এ অযুগোপযোগী ও শিক্ষক স্বার্থবিরোধী অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা পাস করে ইউজিসি শিক্ষক সমাজের সঙ্গে বিদ্রূপাত্মক আচরণ করেছে। আমরা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছি যে, শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি যা অনভিপ্রেত। 

এতে আরো বলা হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্ত্বশাসন দিয়ে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী শুভসূচনা করেছিলেন। কিন্তু বেশকিছু কাল ধরে ইউজিসির আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসনের ধারণার সাথে অসংগতিপূর্ণ। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরবর্তী অস্থিতিশীল বিশ্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে ঠিক এই সময়ে এ ধরণের অযুগোপযোগী ও অযৌক্তিক নীতিমালা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলার কোনো ষড়যন্ত্র কি না তা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন গভীরভাবে খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

ওই বিজ্ঞপ্তে বলা হয়, ইতোমধ্যে সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই অগ্রহণযোগ্য নীতিমালার ব্যাপারে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষার পরিবেশ সাবলীল রাখতে শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সর্বসম্মতিক্রমে এই নীতিমালা প্রত্যাখান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে ফেডারেশন বদ্ধপরিকর। শিক্ষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে এই বিতর্কিত অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা বাতিল করার জন্য ইউজিসিকে আহ্বান জানাচ্ছি, অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এর নেতৃত্বে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একযোগে ইউজিসির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে - dainik shiksha সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ - dainik shiksha মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষায় বন্যার ক্ষত, চিন্তিত অভিভাবকরা - dainik shiksha শিক্ষায় বন্যার ক্ষত, চিন্তিত অভিভাবকরা শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049788951873779