বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত আচার্যের অভিপ্রায়

মো. ইউসুফ আলী |

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয় স্বাভাবিকভাবেই সৎ, আদর্শ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়। সংবাদ পত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দুর্নীতি, শিক্ষকদের অনৈতিক কার্যকলাপের যে ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আদর্শ, দেশপ্রেমিক, সুনাগরিক তৈরির ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে পারছে না। দেশের প্রথম সারির মেধাবীরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের অনেকের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। এ ছাড়া রাজনীতি দুর্বৃত্তায়নে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা দেশপ্রেম, সততা, আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীরাই প্রথম ও দ্বিতীয় সারির কর্মকর্তা হবে এবং যাদের মানসিকতা হবে দুর্নীতিই প্রথম, দুর্নীতিই শেষ। দুর্নীতির বীজ বপন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কথা বলা যায়। রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ে ফিরে যাচ্ছি। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ শুধু একজন রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না একজন জনবান্ধব রাজনীতিবিদ। হাওর পাড়ের নিম্নবিত্ত, দরিদ্র শ্রেণির মানুষের নেতৃত্ব দিয়ে দেশের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবন জীবিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতেন এবং তাদের অধিকার নিয়েই রাজনীতি করেছেন। মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় সে জন্য তিনি আচার্য থাকা সময়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। 

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আজ পর্যন্ত তার আহ্বানে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট সাড়া দেয়নি, যা আচার্যের প্রতি অসম্মান ও অবজ্ঞার শামিল! এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটু সমন্বয়ের অভাবে একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার গঠনে বাধাগ্রস্ত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন-গুচ্ছের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমসাময়িক সময়ে সম্পন্ন হলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ফলাফল প্রকাশ ও বিষয় চয়েসের দীর্ঘসূত্র অবলম্বন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক, বিষয় চয়েস ও ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে ৫ মে। অথচ বুয়েট ভর্তি প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ২৮, ২৯ এপ্রিল সম্পন্ন হবে। একজন শিক্ষার্থী তার পছন্দের বিষয় না পেলেও এখানে ভর্তি হতে হবে। পরে দেখা গেলো ঢাবিতে তার পছন্দের বিষয় এসেছে। কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারলেন না। ঢাবির বিষয় চয়েস ও ভর্তি কার্যক্রম এগিয়ে আনা কী খুব জটিল ব্যাপার? এ শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে এবং ক্যারিয়ার গঠনে বিড়ম্বনার শিকার হবে। যেখানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমছে কম ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার সামর্থ্য কয়জন অভিভাবকের আছে? মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে পত্রিকাগুলো প্রতি বছর সচিত্র প্রতিবেদন ছাপিয়ে থাকে। এর বাইরে আরো অনেক নিম্নবিত্ত, দরিদ্র শিক্ষার্থী আছে যারা অর্থের অভাবে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন না। 

গুচ্ছের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ও বিষয় চয়েস একই সময়ে প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীরা মানসিক ও আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতেন, বেছে নিতে পারতেন তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়। সাবেক রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় দেশের আঠারো কোটি জনগণের দাবি। জনগণ আর কালক্ষেপণ দেখতে চায় না। সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে অন্তর্ভুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং শিক্ষামন্ত্রী কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায়।

লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040891170501709