বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি : ইউজিসির সাথে উপাচার্যদের বৈঠক আজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের কারণে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষার্থীই পাস করেছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে নিয়মিত ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন এবং অনিয়মিত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। উচ্চশিক্ষায় কোন প্রক্রিয়ায় এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি নিশ্চিত করা হবে তা চ‚ড়ান্ত করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা আজ বুধবার বৈঠকে বসছেন। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে বসবেন তারা।  বুধবার (১৪ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, পাস করা এতসংখ্যক শিক্ষার্থী কি উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে পারবে? ভর্তি হলেও কিভাবে সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে? বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন রয়েছে কি? এর জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, উচ্চশিক্ষায় আসন সংকটের কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। তাছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ও না। জীবিকার তাগিদে অনেকেই বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে যায়, কেউ কেউ পাড়ি জমায় প্রবাসেও।

অনেকের ধারণা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হতে না পেরে বহু শিক্ষার্থী এবার নিম্নমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। কারণ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন খুবই সীমিত আর ভালোমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রতিযোগিতা। ফলে এবার বিনা পরীক্ষায় এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া দুর্বল শিক্ষার্থীরা সহজ লক্ষ্য হিসেবে নি¤œমানের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেবে। আর এতেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পোয়াবারো।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ভর্তি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ডিসেম্বরে মূল্যায়নের ফলাফল দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে। এবার কি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যবারের তুলনায় বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের সব সরকারি ও গুটি কয়েক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। কিন্তু করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে সবাই। ভর্তি পরীক্ষা যদি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেটা গুচ্ছ পদ্ধতিতে হবে নাকি সমন্বিত পদ্ধতিতে- তা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। উপাচার্যরা বলেছেন, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন) সভা ডাকা হয়েছে। আগামীকাল আবার ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। এ দুটি বৈঠকের পর উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।

জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিযোগ্য আসন আছে পৌনে ১৩ লাখের কিছু বেশি। কাজেই ভর্তির জন্য আসন সংকট হচ্ছে না। এছাড়া কোন প্রক্রিয়ায় আসন্ন ভর্তির মৌসুম শেষ করা হবে তা নির্ধারণে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইউজিসি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। আজ উপাচার্যরা এ নিয়ে একটি সভা করবেন এবং আগামীকাল উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির সভা রয়েছে। সভা দুটির পর ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, কোন পদ্ধতিতে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অ্যাডমিশন কমিটি, ডিনস কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করা হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেবে কিনা এবং করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সম্ভব হবে কিনাÑ জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এর প্রতিটি বিষয়ই ওই সব কাউন্সিল ও কমিটিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। কিন্তু তিনি সেই নতুন পদ্ধতির বিষয়টি খোলাসা করে বলেননি।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চাই। এ ক্ষেত্রে তিনটি গুচ্ছ হবে। এগুলো হচ্ছে কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ। প্রথম দুটির জন্য দুটি পরীক্ষা হবে। শেষেরটির জন্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজ- এ তিনটি পরীক্ষা হবে। তবে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় আসতে চায় না বলে জানিয়ে দিয়েছে আগেই।

এদিকে চলতি বছর জেএসসি ও এসএসসির ফলাফল মূল্যায়নের মাধ্যমে এইচএসসির ফল নির্ধারণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়- কোনো শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা আছে কিনা। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলও নির্ভর করে এই দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেলে পড়তে চাইলে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম গ্রেড প্রয়োজন হয়। বর্তমান নিয়মে বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাওয়া মোট নম্বরের ৪০ ভাগ এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। কাজেই এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় শুধু মূল্যায়ন সনদ দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কীভাবে নম্বর যোগ হবে তার কৌশল এখনো নির্ধারিত হয়নি।

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত ১ এপ্রিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে ২২ মার্চ পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর গত সপ্তাহে সরকার ঘোষণা দেয় করোনার কারণে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024809837341309