বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাঞ্ছিত হোক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সম্প্রতি একটি ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ অভিন্ন নীতিমালা আসছে’ শিরোনামে খবর বেরিয়েছে। দেশপ্রেমিক শিক্ষানুরাগী জনগণ ভাবার অবকাশ পাচ্ছেন, তাঁদের ট্যাক্সের অর্থ বিফলে যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লেখালেখি করে আসছি। কথায় বলে শ্রম বিফলে যায় না! ইংরেজিতে যাকে বলে লেবার মাস্ট নট গো আন রিওয়ার্ডেড। আমাদের শ্রমের ফলোদয়ের রেখা আভাসিত হয়েছে। যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ততই মঙ্গল। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারটি দেশ ও জাতির আত্মপরিচয়ের শ্লাঘার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মেধাবী সুশিক্ষক নিয়োজিত না হলে জাতির জন্য আফ্রিকার একসময়ের হটিনটটদের চেয়েও শোচনীয় ভবিষ্যৎ অবশ্যম্ভাবী।

শিক্ষাকে দলীয় বেকারদের সুলভ আধার ভেবে নেওয়া হয়েছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষমতাবানদের পৈতৃক সম্পত্তি গণ্য করে ভাগাভাগির ব্যবস্থা হয়েছে বেগবান। একসময় দেখা যেত স্কুল-কলেজ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে আগেই অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে স্থায়ী করার জন্য লোকদেখানো সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা নেওয়া হতো এবং আগের নিয়োগপ্রাপ্তকে স্থায়ী করা হতো। তা সে যতই দুর্বল মেধার হোক না কেন। আর প্রকৃত মেধাবীরা বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যেতেন। এখনো তার পুনরাবৃত্তি প্রকট। দলীয় লেজুড়বৃত্তি, ক্ষমতাবানদের সন্তান-সন্ততি, শিক্ষকের ছেলে-মেয়ে বা হবু জামাইয়ের জন্য শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অনুকূলে নানা অভিসন্ধি গৃহীত হয়। মেধা যেন তাদের মধ্যেই প্রদীপ্ত। ফলে দেশজুড়ে শিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকায় এসব নৈরাজ্যের কথা পত্রিকার পাতায় এসে যায়।

যা হোক, এসব কাসুন্দি না ঘেঁটে আসল কথায় ফিরে আসি। পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালার যে ছক আমরা দেখলাম, তাতে চলমান অপব্যবহার রোধ হবে বলে আশা করা যায়। এতে সত্যিকার মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবেন। তাই বলে ‘ইভিল জিনিয়াস’ যেন জাতি গঠনের ব্রতপীঠকে কলুষিত না করে।

পরীক্ষা গ্রহণের আগে সরষের ভূত না তাড়ালে সব আয়োজন পণ্ড হবে। পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে টঈে কর্তৃপক্ষ এমন সব পরীক্ষিত ব্যক্তিকে বেছে নেবেন, যাঁরা সব ধরনের আবিলতামুক্ত এবং যাঁদের কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষায় উমেদার নয়। শিক্ষা বোর্ডগুলো একসময় এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিত। বর্তমানে শিক্ষা বিষয়ের দেখভালের দায়িত্ব একজন মেধাবী রাজনীতিকের ওপর ন্যস্ত। তিনি বিষয়টির প্রতি অবশ্যই নজর রাখবেন। বিলম্বিত হলে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য নিরপেক্ষ মেধাবী ব্যক্তিকে হয়তো বিদেশ থেকে ধার করে আনতে হবে।

যেহেতু নিয়োগ পরীক্ষা সমন্বিতভাবে গৃহীত হবে, তাই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে দেখবে, কার মাধ্যমে সততা ও গোপনীয়তা অধিকতর সংরক্ষিত হবে। ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে গিয়ে জাতির সর্বনাশ ঘটার মতো দুষ্কর্ম যেন না ঘটে।

কিছু ভাগ্যবান চিরকালই আশীর্বাদ পেয়ে এসেছে। তারা হয়তো পেতেই থাকবে। আমরা সবিনয়ে অনুরোধ জানিয়ে এসেছি, ভাগ্যবানদের সুবিধা প্রদানের জায়গা যেন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না হয়। এ বিষয়ে শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই ও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত হলেও আগেকার দিনের মতো সম্ভাব্য নিয়োগযোগ্য ব্যক্তির বাচনভঙ্গি ও উপস্থাপন কৌশলও পরখ করা জরুরি। বিষয়ের জ্ঞানে পারদর্শী অনেকে মুখ খুলতে পারে না। এদের ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অনেকের স্মরণে আছে, অর্ধশত বছর আগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পৃথক চঝঈ আবেদনকারীর নিজ বিষয় পরিবেশনের দক্ষতা যাচাই করত।

একজন মেধাবী শিক্ষক নিজ বিষয়ের অনুষঙ্গগুলোর খোঁজ রাখবেন, তার সঙ্গে যুক্ত হবে স্ফটিকের মতো বিচিত্র ধারায় নিজেকে বিকশিত করার দক্ষতা। শিক্ষাবিদ শহীদুল ইসলাম যথার্থ শিক্ষকের এই যোগ্যতা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন।

একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে সাহিত্য নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট। দেখা গেছে, অনেক সমাজবিজ্ঞানী ঘটা করে সাহিত্যে ডিগ্রিধারীদের চেয়ে সাহিত্যের অলিগলিতে খোঁজ রাখেন বেশি। সুতরাং একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর পঠনীয় বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়ে যেন উঁকি মারতে সমর্থ হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের ক্ষুদ্র বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের রূপরেখার যে অনুভবগুলো সংক্ষেপে পরিবেশিত হলো, তা অনুসরণের পদক্ষেপ নিলে জাতীয় শিক্ষার মানের অধোগামিতা রোধ করা সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সবার বিশ্বাস।

 

লেখক : গোলাম কবির, রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025100708007812