বিশ্ববিদ্যালয় বদলে দিতে পারে দেশ

সোহাগ মনি |

একটি দেশকে পরিমাপ করার সবচেয়ে গুরুত্ববহ মাপকাঠি হচ্ছে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়। একটি দেশকে বদলে দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ থেকে অর্জিত বিদ্যাই দেশ এবং দশের কাজে লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি সেভাবে শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে না পারে তবে এর প্রভাব পুরো জাতির ওপর বর্তায়। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সমৃদ্ধির ইমারতের একেকটি ইট।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে খুব ভালো কিছু দেখা যায় না। শিক্ষাজীবন শেষ করে অভিশপ্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। দিনশেষে যোগ্যতার মাপকাঠিতে পড়তে দেখা যায় না অধিকাংশকেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী। সাধারণত নোট, শিট পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবন পার করে দেই আমরা। জ্ঞানের সম্ভার অনেকটা অজানাই রয়ে যায়। নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রবণতা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব একটা দেখা যায় না। কারণ নোট, শিট পড়ে পরীক্ষায় পাস করা যায়, এত কিছু ভাবার কী প্রয়োজন আছে! এই ধরনের মানসিকতা কাজ করে শিক্ষার্থীদের। এর পিছনে শিক্ষার সিলেবাস এবং শিক্ষকের দায়সারা ভাব অনেকটা দায়ী। অ্যাসাইনমেন্ট হবে সব সময় গবেষণাধর্মী, কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটাকে মাত্র হাতের কাজ ভাবে! একেকটা অ্যাসাইনমেন্ট থেকে বের হয়ে আসবে একেক ধরনের মতবাদ, যেটা কোনো বিষয়কে ভিন্ন আঙ্গিকে দাঁড় করাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের মতো বিদ্যাভ্যাস করছে, যেখানে নোট-শিটের ছড়াছড়ি।

প্রতিদিন নতুন নতুন চিন্তা বের করতে হবে দেশের প্রয়োজনে। সিলেবাসও হওয়া উচিত দেশের প্রয়োজন মোতাবেক, যেখান থেকে বাস্তবসম্মত ফল কাজে লাগানো যায়। শুধু নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে রাখলে হবে না, প্রতিটা পর্যায় হবে বিস্তৃত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রতিটি বিষয় হতে হবে আরো যুগোপযোগী। প্রতিটা বিভাগে দেশের প্রয়োজন অনুসারে কোনো বিষয়কে যুক্ত করে নতুন মতবাদ তৈরি করার প্রয়াস থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যাতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো যায়, ঠিক সেভাবেই ভাবতে হবে আমাদের। হাতে কলমে, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে করে তাত্ত্বিক জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকি আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে কর্মপরিসরভিত্তিক কোর্স চালু করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের আলোচনার জায়গাটা প্রস্তুত করে, মতবিনিময়ের সুযোগ করে দিতে পারলে, অনেক জ্ঞান বেরিয়ে আসবে, গবেষণার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।

সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও শিক্ষার্থীদের কোর্স রাখা যেতে পারে। এতে সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসাসহ ভেতরে শক্তি তৈরি হবে, যেটা অধিকাংশ শিক্ষার্থীদেরই নেই। প্রতিটা বিভাগে সৃজনশীলভিত্তিক কিছু উদ্ভাবনীর প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড আয়োজন করতে পারলে নতুন কিছু বেরিয়ে আসবে।

একুশ শতক আমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময় নয়। চিন্তা এবং বুদ্ধিভিত্তিকতার সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী করে তোলার সময় এখনই। না হয় আমরা পিছিয়ে পড়ে সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাব। টিকে থাকতে হলে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠকে সর্বাধিক কাজে লাগাতে হবে। এখনই সময় বদলে দেওয়ার, বদলে যাবার।

 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

সূত্র: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049600601196289