সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপনের পর থেকেই তা বাতিলে সোচ্চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকেরা। তবে পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এ ছাড়া ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।
একইসঙ্গে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা ১ জুলাই থেকে টানা কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গত দুইমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। গত ৪ জুন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। ওইদিন নতুন করে সরকারকে আলটিমেটাম দেন ফেডারেশনের নেতারা।
শিক্ষক নেতাদের বেঁধে দেয়া সেই সময়সীমা শেষ হবে সোমবার (২৪ জুন)। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে পরদিন ২৫ জুন থেকে টানা তিনদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকেরা।
এরপর ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। তারপরও দাবি না মানলে ১ জুলাই থেকে টানা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাবেন তারা।
এদিকে, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতা ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যুক্ত করতে যে প্রজ্ঞাপন সরকার জারি করেছিলো, সেই সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে। অন্যদিকে, শিক্ষক নেতারাও তাদের দাবিতে অনড়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মসূচি চলবে। এরপর আমরা আর সময় দিতে চাই না। ১ জুলাই থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো আলাপ-আলোচনার কথা শুনিনি। আমরা যে আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, সেটাতেই আমরা অনড় আছি। ২৪ জুনের মধ্যে দাবি না মানলে পরদিন ২৫ জুন থেকে আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে।
শনিবার (২২ জুন) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের বৈঠক রয়েছে এবং সেখানে কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান এ শিক্ষক নেতা।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। তারা বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্যমতে, প্রত্যয় স্কিম চালু হবে। এটা থেকে সরে আসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাদ দেয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা বা আলোচনা নেই।
কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তারা (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) তো বলেছিলেন অন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ পেনশনের (সর্বজনীন) আওতায় আসলে তারাও এটা মেনে নেবেন। সরকার তো ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই থেকে সব সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বজনীন পেনশনের স্কিমের আওতায় আনছে। তাহলে এখনো তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) আপত্তি কেনো?
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এ সময় দাবি আদায় না হলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করেন নেতারা।