বিশ্বের বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির একটি বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির একটি। জিডিপিতে আমরা বিশ্বের ৩৫তম, ২০৩৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ ২০তম জিডিপির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে আমরা আশা রাখি।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরও আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। চাল, সবজি, ফল, মাছ, মাংস এবং ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশেগুলোর একটি।

 

আজ (বুধবার) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কমনওয়েলথ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ফোরাম ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও কমনওয়েলথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সুচিন্তিত এবং পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার আসার পর সকল উন্নয়নের কাজ থমকে যায়। বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছর এবং সামরিক সরকারের পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ মন্দার কবলে পড়েছিল।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আমরা দেশকে সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে দেশ গঠনের কাজে মনোনিবেশ করি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারের ধারাবাহিকতা এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচি দ্রুত বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি আঘাত হানার পূর্বের এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল সাত শতাংশেরও বেশি। এমনকি করোনা মহামারির সময় যখন বহু দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, তখনও আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫১ শতাংশ। এটি আমাদের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতারই প্রমাণ বহন করে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা পৌনে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু জিডিপি বৃদ্ধিই নয়, বাংলাদেশে গত দেড় যুগে দৃশ্যমান বহুমাত্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, গত প্রায় ১৫ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ থেকে ১৮.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫৯ বছরে থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। এই সময়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২,৭৬৫ মার্কিন ডলার। আমরা স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্ব নেয়ার পর আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্য অর্জনের পর আমরা কাজ করছি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত স্মার্ট দেশে এবং ২১০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে টেকসই বদ্বীপে পরিণত হওয়ার। সে লক্ষ্যে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সকল খাতই উন্মুক্ত। তবে এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত, চিকিৎসা উপকরণ, গাড়ি ও জাহাজ নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তিসহ অনেক খাতে অধিক বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এ সকল খাতে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি ব্যবসা হতে উদ্ভূত লাভ/ডিভিডেন্ড নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিডা অনলাইনভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর মাধ্যমে ২৬টি সংস্থার ৭৮টি সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন। এজন্য আমরা সমগ্র দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ১০৯টি হাইটেক এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবিউশন সেন্টার স্থাপন করছি। যেখানে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। আমাদের সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে। দেশের প্রায় সকল মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে বা হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে শিগগিরই ঢাকার সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে শুধু বাংলাদেশেই না, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল চালু হবে শিগগিরই। চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় গত বছর মেট্রোরেলের একাংশ এবং কয়েকদিন আগে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব অবকাঠামোর পুরো অংশ চালু হলে ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কমনওয়েলথ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ফোরামের চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050899982452393