বিশ্বে ৩ জন কিশোরীর মধ্যে একজন স্কুলে যেতে পারে না: ইউনিসেফ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন দরিদ্র কিশোরীর মধ্যে একজন স্কুলে যেতে পারে না। গতকাল প্রকাশিত ইউনিসেফের এক নতুন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এদিন এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ফোরামে জড়ো হওয়া মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ‘অ্যাড্রেসিং দ্য লার্নিং ক্রাইসিস: অ্যান আর্জেন্ট নিড টু বেটার ফাইন্যান্স এডুকেশন ফর দ্য পুরেস্ট চিলড্রেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে গণশিক্ষায় খরচ বণ্টনে প্রধান অসমতাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছে ইউনিসেফ। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দারিদ্রতা, লিঙ্গ বৈষম্য, শারীরিক অক্ষমতা, জাত বা পড়ানোর ভাষা, স্কুল থেকে বাড়ির দূরত্ব ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে দরিদ্র শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তহবিল সীমিত ও এর বণ্টন অসম হওয়ায় ক্লাসরুমগুলো আকারে বড় হয়, শিক্ষকরা স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়, উপকরণের ঘাটতি থাকে ও স্কুলের অবকাঠামো হয় দুর্বল। এসবের কারণে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, শিক্ষা ও তালিকাভুক্তকরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনিরিয়েত্তা ফোর বলেন, বিশ্বের সবদেশেই দরিদ্র শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলস্বরূপ নিজেরাও ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যতদিন গণশিক্ষার ক্ষেত্রে ধনী শিশুদের জন্য অসমভাবে ব্যয় বন্ধ না হবে, ততদিন দরিদ্র শিক্ষার্থীদের দরিদ্রতা ছাড়িয়ে যাবে, বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতা করতে ও সফল হতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না তারা।  বিশ্বের ৪২টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্রতম ২০ শতাংশ শিশুর জন্য যা ব্যয় করা হয় এর থেকে দ্বিগুণ ব্যয় করা হয় ২০ শতাংশ ধনী শিশুদের জন্য।  শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য দেখা যায় আফ্রিকার ১০টি দেশে। সেগুলোয়, দরিদ্র শিশুর থেকে ৪ গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ থাকে ধনী শিশুদের জন্য। গিনি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। দেশ দুটিতে যথাক্রমে ধনী শিশুরা দরিদ্রদের তুলনায় শিক্ষা খাতে সরকারি তহবিলের ক্ষেত্রে ৯ ও ৬ গুণ বেশি লাভবান হয়ে থাকে।  বার্বাডোজ, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন এই দেশগুলোতে দরিদ্র ও ধনী শিশুদের জন্য সমভাবে খরচ করা হয়। প্রতিবেদনটি বলা হয়েছে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সমপদের অভাব শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ধরণের বাধা সৃষ্টি করে। স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে ব্যর্থ হয়। বিশ্ব ব্যাংক অনুসারে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাসের পরও একটি সহজ গল্প পড়তে বা বুঝতে পারে না।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনটিতে সরকারদের জন্য কিছু সপষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশীয় যোগানের ভিত্তিতে তহবিল এমনভাবে বণ্টন করতে হবে যাতে, দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের শিশুরা সরকারি তহবিলের অন্তত ২০ শতাংশ অর্থ পায়। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষায় সরকারি তহবিল বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে, যেখানে  দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পড়ে। উচ্চ পর্যায়গুলোতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক শিশুকে অন্তত এক বছর সর্বজনীন ‘প্রি-প্রাইমারি’ শিক্ষা দিতে হবে। প্রি-প্রাইমারি শিক্ষা হচ্ছে স্তম্ভ যার ওপর স্কুলের প্রত্যেক পর্যায় নির্মিত। এ শিক্ষায় দীক্ষিত শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা কম ও দেশের অর্থনীতি এবং সমাজে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা বেশি। জাতীয় শিক্ষা বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032742023468018