স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে বিষন্ন ও অমনোযোগী থাকেন। বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে শিশুর মনোজগতে। ফলে ক্লাসে মনোযোগী না হওয়া, পড়া না বোঝা, বিষন্ন থাকা, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়াসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। শিশুর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে।
এ ধরনের বিষন্ন ও বিপথগামী শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিশু-
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন এ পাইলট প্রকল্পকে বলা হচ্ছে ‘কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধকল্পে বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তন'। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সুফল মিললে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হবে।
জানা গেছে, ‘বিদ্যালয় সমাজকর্ম’ হলো সমাজকর্মের বিশেষ ক্ষেত্রে যেখানে একজন বিশেষজ্ঞ সমাজকর্মী বা কাউন্সেলর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও আচরণগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও দলগত সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মী বা কাউন্সেলর কাউন্সেলিং, মেন্টাল সাপোর্ট, একাডেমিক সাপোর্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে, একাডেমিক সাফল্য অর্জনে, কর্মদক্ষতা অর্জনে ও সামগ্রিক বিকাশে উৎসাহিত করেন।
জানতে চাইলে ‘কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধকল্পে বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তন' পাইলট প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা যে তিনটি স্কুলে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছি সেখানে
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বিদ্যালয় সমাজকর্ম পদ্ধতি চালু করা হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি বিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম বিদ্যালয় সমাজকর্মের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয় সংখ্যা বাড়িয়ে আটটি করা হয়। তবে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন সামরিক সরকার বিদ্যালয় সমাজকর্মের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন, মানসিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের একটি অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে কাজ করছে বিদ্যালয় সমাজকর্ম। বাংলাদেশেও এ পদ্বতির প্রয়োগ দেশের শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা সংশ্লিষ্টদের।
মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ দৈনিক আমাদের বার্তাকে আরো বলেন, আমরা তিনটি স্কুলে পাইলট প্রকল্প বাস্তাবায়ন ছাড়াও আরো তিনটি স্কুলে সেমিনার আয়োজন করেছি। সেখানে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন। তিন মাসের পাইলটিং প্রায় শেষের দিকে। তিন স্কুলে চলা পাইলটিংয়ে যদি সুফল মেলে তবে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে পাইলটিংয়ের ফল ও অংশীজনদের মতামত পর্যালোচনা করে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সরকার চাইলে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ প্রকল্প নিতে পারে।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিশোর অপরাধ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও চুরি, হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, পকেটমার, মাদকসেবন ও ইভটিজিং থেকে শুরু করে এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিশোররা এখন যুক্ত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোরদের অপরাধী হওয়ার নেপথ্যে কিছু স্বভাবগত কারণ রয়েছে। যেমন, বাবা-মা তথা পরিবারের অযত্ন-অবহেলা, উদাসীনতা, স্নেহহীনতা, সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানে অমনোযোগিতা, পারিবারিক পরিমণ্ডলের ঝগড়া-বিবাদ, দারিদ্র্য, সুষ্ঠু বিনোদনের সংকট ইত্যাদি। এসব কারণে বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝড়েও পড়ছেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।