বিষণ্ন শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক করার উদ্যোগ

মিথিলা মুক্তা |

স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে বিষন্ন ও অমনোযোগী থাকেন। বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে শিশুর মনোজগতে। ফলে ক্লাসে মনোযোগী না হওয়া, পড়া না বোঝা, বিষন্ন থাকা, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়াসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। শিশুর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে। 

এ ধরনের বিষন্ন ও বিপথগামী শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিশু-

কিশোরদের বিষন্নতা, মনোযোগিতা ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর। স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে একজন সমাজকর্মী বা কাউন্সিলর এ ধরনের সমস্যার মূল খুঁজে বের করবেন ও তা সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করবেন। এ ব্যবস্থায় কাউন্সেলর কাউন্সেলিং, মেন্টাল সাপোর্ট, একাডেমিক সাপোর্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে, একাডেমিক সাফল্য অর্জনে, কর্মদক্ষতা অর্জনে ও সামগ্রিক বিকাশে উৎসাহিত করবেন। বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তনে ইতোমধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন এ পাইলট প্রকল্পকে বলা হচ্ছে  ‘কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধকল্পে বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তন'। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সুফল মিললে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হবে। 

জানা গেছে, ‘বিদ্যালয় সমাজকর্ম’ হলো সমাজকর্মের বিশেষ ক্ষেত্রে যেখানে একজন বিশেষজ্ঞ সমাজকর্মী বা কাউন্সেলর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও আচরণগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও দলগত সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মী বা কাউন্সেলর কাউন্সেলিং, মেন্টাল সাপোর্ট, একাডেমিক সাপোর্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে, একাডেমিক সাফল্য অর্জনে, কর্মদক্ষতা অর্জনে ও সামগ্রিক বিকাশে উৎসাহিত করেন।

জানতে চাইলে ‘কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধকল্পে বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তন' পাইলট প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা যে তিনটি স্কুলে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছি সেখানে

একজন করে মোট তিনজন কাউন্সেলর কর্মরত আছেন। তারা মূলত শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সহপাঠীসহ শিশুর সঙ্গে সম্পৃক্ত মহলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ও কাউন্সেলিং করে বিষন্ন, অমনোযোগী, বিপথগামী শিশুদের সমস্যার মূল খুঁজে বের করবেন ও সেসব দিকে শিশুকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে পথ খুঁজে বের করবেন। বিদ্যালয় সমাজকর্ম ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিষন্ন, অমনোযোগী ও বিপথগামী শিশু-কিশোরদের সমস্যার মূল খুঁবে করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বিদ্যালয় সমাজকর্ম পদ্ধতি চালু করা হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি বিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম বিদ্যালয় সমাজকর্মের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয় সংখ্যা বাড়িয়ে আটটি করা হয়। তবে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন সামরিক সরকার বিদ্যালয় সমাজকর্মের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন, মানসিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের একটি অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে কাজ করছে বিদ্যালয় সমাজকর্ম। বাংলাদেশেও এ পদ্বতির প্রয়োগ দেশের শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা সংশ্লিষ্টদের।

মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ দৈনিক আমাদের বার্তাকে আরো বলেন, আমরা তিনটি স্কুলে পাইলট প্রকল্প বাস্তাবায়ন ছাড়াও আরো তিনটি স্কুলে সেমিনার আয়োজন করেছি। সেখানে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন। তিন মাসের পাইলটিং প্রায় শেষের দিকে। তিন স্কুলে চলা পাইলটিংয়ে যদি সুফল মেলে তবে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে পাইলটিংয়ের ফল ও অংশীজনদের মতামত পর্যালোচনা করে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সরকার চাইলে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ প্রকল্প নিতে পারে। 

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিশোর অপরাধ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও চুরি, হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, পকেটমার, মাদকসেবন ও ইভটিজিং থেকে শুরু করে এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিশোররা এখন যুক্ত হচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোরদের অপরাধী হওয়ার নেপথ্যে কিছু স্বভাবগত কারণ রয়েছে। যেমন, বাবা-মা তথা পরিবারের অযত্ন-অবহেলা, উদাসীনতা, স্নেহহীনতা, সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানে অমনোযোগিতা, পারিবারিক পরিমণ্ডলের ঝগড়া-বিবাদ, দারিদ্র্য, সুষ্ঠু বিনোদনের সংকট ইত্যাদি। এসব কারণে বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝড়েও পড়ছেন। 

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা - dainik shiksha জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার - dainik shiksha পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ - dainik shiksha পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে - dainik shiksha কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056979656219482