বিসিএসের চাহিদাপত্রেও বিলম্ব

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখন প্রথম শ্রেণির শূন্যপদগুলোর চাহিদাপত্র নিয়েও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে থাকছে; বিঘ্ন ঘটছে সরকারি কাজে। একই সঙ্গে শূন্যপদ দ্রুত পূরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও উপেক্ষা করা হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষা না দিয়েই বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার প্রার্থীর। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সমকালে প্রকাশিত খবরে  এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন দেলোয়ার হোসেন। 

প্রথম শ্রেণিতে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে চাহিদাপত্র নিয়ে থাকে সরকারি কর্ম-কমিশন (পিএসসি)। এর ভিত্তিতে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সূত্র জানায়, বিসিএসের শূন্যপদ পূরণের জন্য চাহিদাপত্র চেয়ে সর্বশেষ গত বছরের ১৯ নভেম্বর জনপ্রশাসনে চিঠি দেয় পিএসসি। কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর গত ১০ এপ্রিল ৪০তম বিসিএসের সেই চাহিদাপত্র জনপ্রশাসন থেকে পিএসসিতে পাঠানো হয়।

এরপর ১১ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ৪০তম বিসিএসের চাহিদাপত্র পাওয়ার প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলেও পরবর্তী বিসিএসের জন্য নতুন কোনো চিঠি দেয়নি পিএসসি। সমন্বয়হীনতার ফলে নতুন একটি বিসিএস পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রায় এক বছরের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। অথচ প্রতিটি বিসিএস এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শেষ করতে পিএসসি রোডম্যাপও তৈরি করেছে। 

পিএসসি এখনও পরবর্তী বিসিএসের চাহিদাপত্রের জন্য চিঠি না দেওয়ায় আগামী এক বছরের মধ্যে আরেকটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা কম। কারণ, পিএসসির চাহিদাপত্রের চিঠি পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দেবে। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নতুন ক্যাডার পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। 

বিসিএস ক্যাডারের পদগুলো সাধারণত শূন্য হওয়ার পর তা পূরণের জন্য চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। এতে একটি বিসিএসের কার্যক্রম শেষ না হতেই সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে আবার শূন্যপদ সৃষ্টি হয়ে যায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রথম শ্রেণিতে পদ রয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৪টি।

এসব পদে কর্মরত আছেন এক লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন কর্মকর্তা। শূন্য আছে ৪৮ হাজার ৭৯৩টি। প্রথম শ্রেণির পদগুলোর বেশিরভাগই বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পূরণ করা হয়। আর বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কাজগুলো বাস্তবায়ন করেন। ফলে দেশে প্রথম শ্রেণির প্রায় অর্ধলাখ পদ খালি থাকায় সরকারি অনেক কাজে বিঘ্ন ঘটছে। 

২০১৬ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রশাসনের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ৪ মার্চ ও ২০ নভেম্বর দুটি সচিব সভায় শূন্যপদ পূরণে প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক সচিবকে তাগিদ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ৪১তম বিসিএস নিয়ে এখনই ভাবছি

না। পরীক্ষা কবে হবে সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারব না। কারণ, এই মুহূর্তে চারটি বিসিএসের কাজ চলছে। এর সঙ্গে আরও একটি বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। 

তিনি বলেন, এগুলো শেষ হোক। তারপর পরবর্তী বিসিএসের কাজ শুরু হবে। ৪১তম বিসিএসের বিলম্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেরি হতেই পারে। কারণ, একটি বিসিএসের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত থাকে। 

জানা যায়, প্রথম শ্রেণির পদগুলো পূরণের জন্য শুরুতে চাহিদাপত্র চেয়ে পিএসসি চিঠি দেয় জনপ্রশাসনে। এরপর স্ব স্ব ক্যাডারের শূন্যপদের তথ্য জানতে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন। শূন্যপদের তথ্য পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পদসংখ্যা চূড়ান্ত করে শূন্যপদের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে জনপ্রশাসনের সেই প্রস্তাব পিএসসিতে যায়।

এরপর পিএসসি সংশ্নিষ্ট বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় ছয় মাস লেগে যায়। অনেক সময় পিএসসি জনপ্রশাসন থেকে চাহিদাপত্র পাওয়ার পরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব হয়। ফলে শূন্যপদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ৪১তম বিসিএসের জন্য এখনও পিএসসি থেকে কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে শূন্যপদের হিসাব জানতে চাওয়া হবে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, শূন্যপদের তথ্য নিতে এতদিন বিলম্ব হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। সবার সদিচ্ছা থাকলে একটি বিসিএস এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব।

বয়সসীমা শেষ হওয়ার উপক্রম হওয়া শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কয়েক বছর ধরে বিসিএস পরীক্ষার জন্য দিন-রাত পড়াশোনা করতে হয়। বিসিএস পরীক্ষায় এখন অনেক প্রতিযোগিতা। ফলে অনেকেই প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেন না। এরপর যদি দীর্ঘসূত্রতার কারণে বয়স চলে যায়, সেটা খুবই দুঃখজনক।

সরকারি চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির প্রস্তাবও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চাকরিপ্রত্যাশীদের কথা বিবেচনা করে বিসিএসের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করবেন সংশ্নিষ্টরা- এমনটাই আশা চাকরিপ্রত্যাশীদের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027720928192139