বিহার পারলেও বাংলা পারেনি কেন?

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য |

‘বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব’…একসময়ে নবাব সিরাজদ্দৌলা যাত্রাপালায় এই ডায়লগটি ব্যবহার করা হত। এখন বাংলা-বিহার যোজন যোজন দূরুত্বে।

২০১৬ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলকে কেন্দ্র করে বিহার যা করতে পেরেছে স্বাধীনদেশ বাংলাদেশ তা পারেনি। বিহার যেখানে সরব বাংলা সেখানে নীরব। অথচ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মনে হয়- সুকুমার রায়ের ‘ঝালাপালা’ নাটকের ঘটিরাম আর কেষ্টা বুঝি বাস্তবের মাটিতে নেমে এসেছে!

বাংলা-বিহারের মধ্যে সবকিছু আলাদা হলেও এখনও দু’য়েকটা মিল রয়ে গেছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ও বিহারে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষায় শীর্ষস্থানাধিকারীরা কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নি। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। আর এই না পারার বিষয়টা ফেসবুক, টুইটারে ভাইরাল হয়ে ওঠছে।

বাংলাদেশে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পাসের হার ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখে বিশেষজ্ঞরা এমনিতেই খুশি নন। তারা বলছেন, পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বরং কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় পাস করার জন্য, ফেল করার জন্য নয়। ঠিকই তো শিক্ষার্থী ফেল করবে কেন? এ অবস্থায় পরীক্ষার ফলে শীর্ষস্থানাধিকারীদের এমন দৈন্যদশা-এ যেন ‘এমনিতেই নাচুনে বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি’র কথা মনে করিয়ে দিল।

গত দু’বছর আগে এসএসসি ও এইচএসসি শেষে যে ব্যাচটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে ইংরেজি বিভাগে মাত্র ২ জন উত্তীর্ণ হতে পেরেছিল। ওই বছর প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই একই অবস্থা ছিল। ওই সময়ও বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্রে আদ্দিষ্ট হয়ে শিক্ষকরা ঢালাও নম্বর দিচ্ছেন। এতে এসএসসি ও এইচএসসিতে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার বাড়লেও শিক্ষার মান যে বাড়েনি তা ফুটে ওঠেছিল। তবে শিক্ষকদের ঢালাও নম্বর দেয়ার কথা বলা হয়েছিল তা কেউ স্বীকার করেন নি। কিন্তু যারা শিক্ষকের পরিবারে রয়েছেন তারা বলতে পারবেন শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে নম্বর দেয়ার জন্য বোর্ড থেকে কী বলে দেওয়া হয়?

এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মাছরাঙ্গা টেলিভিশন গত কয়েকদিন আগে চলতি বছরের মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কয়েকটি প্রশ্ন রাখে। এই ১৩ জন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নামটি পর্যন্ত শুদ্ধ করে বলতে পারেনি। ‘আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি-এই বাক্যটিরও ইংরেজি বলতে পারেনি। পারেনি দেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের তারিখ কবে। নেপালের রাজধানীর নামটিও তারা বলতে পারেনি। অথচ মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ নামে একটি পাঠ্যবই রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ফেসবুক, টুইটারে বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা চললেও সরকার এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছে।

ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছে বিহারেও। বিহারে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কেলেঙ্কারি ঘটেছে। তারা এই কেলেঙ্কারি মোকাবেলা করছে। গত ২ জুন কলকাতার দৈনিক ‘এই সময়’জানিয়েছে, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কী যেন শেখানো হয়’-উত্তর-‘ওই তো রান্নাবান্না’। ‘আচ্ছা নিউটন, প্রোটন কী বলো তো’? অনেকে মাথা চুলকে, আকাশ-পাতাল ভেবে, নাক কুঁচকে, ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে বোকার মত হাসি। এটাই উত্তর। কারণ আসল উত্তর তো জানা নেই। ‘পানি’ আর ‘এইচটুও’র মধ্যে সম্পর্ক কী? প্রশ্নটা যার দিকে ধেয়ে গেল, তার মুখ দেখে মনে হল প্রশ্নকর্তা বুঝি বিজাতীয় কোনো ভাষায় কথা বলছেন। কী যে প্রশ্ন করে ছাই, কিছুইতো বোঝা যায় না? প্রথম প্রশ্নের উত্তরদাতা এবার বিহারের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলাবিভাগে প্রথম স্থানাধিকারী আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরদাতা বিহারের ‘সায়েন্স টপার’।

এরপরে সারা ভারতে এটি হাসির খোরাক হয়। একপর্যায়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেন। ফলাফলে শীর্ষস্থান অর্জনকারীরা ফের পরীক্ষা দেয়। কিন্তু পাস করতে পারেনি। এরফলে তাদের আগের ফলাফল বাতিল করা হয়। এথন কীভাবে তারা ওই ফলাফলে শীর্ষস্থান পেয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে-পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কিছু সাধারণ বিষয়ের উত্তর শিক্ষার্থীরা দিতে পারেনি। এজন্য ফের পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু পাস করতে পারেনি। আগের ফলাফল বাতিল হয়ে যায়। বাংলাদেশে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারেনি। কেন শিক্ষার্থীরা সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বোর্ড কোনো তদন্ত অথবা তাদের নিয়ে ফের পরীক্ষার আয়োজন করেনি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, বিহার পারলেও বাংলা পারেনি কেন? ওখানেও নকল হয়-বাংলায়ও নানা কৌশলে নকল বিদ্যমান। তাহলে পিছিয়ে কেন বাংলা?

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষা সাংবাদিক ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব গবেষক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036849975585938