বিয়ের আসরে কনের বাবাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর মগবাজারে বিয়ের আসরে কনের বাবাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। ওই ঘটনায় আটক সজীব আহমেদ রকিকে (২৩) মামলার আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাতিরঝিল থানায় মামলাটি করেন নিহত তুলা মিয়ার (৪৭) ছেলে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ। তিনি জানান, অভিযুক্ত ঘাতক সজীবকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজার দিলু রোডের প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউস নামে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আসরে সজীবের ছুরিকাঘাতে খুন হন কনের বাবা তুলা মিয়া। এতে গুরুতর আহত কনের মা ফিরোজা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে বেলা দেড়টার দিকে। বিয়ের মূল অনুষ্ঠান তখনও শুরু হয়নি। বর এসে পৌঁছেছে। একে একে মেহমান ও আত্মীয়স্বজনরা পৌঁছতে থাকেন অনুষ্ঠানস্থলে।

দুপুর হয়ে যাওয়ায় বরের বাড়ির লোকসহ আত্মীয়দের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের প্রথম ব্যাচ বসানো হয়। প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসের দ্বিতীয়তলায় একদিকে বর এবং অপরদিকে বিয়ের সাজে বসেছিলেন কনে।

হঠাৎ এক যুবক এসে কনেকে টেনে-হিঁচড়ে আসর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মেয়েকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন বাবা-মা। এতে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই যুবক। সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে কনের বাবা-মাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে।

এতে বাবা লুটিয়ে পড়েন। রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কনের মাকেও ছুরি দিয়ে আঘাত করে যুবকটি। গুরুতর আহত অবস্থায় কনের বাবা-মাকে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসক জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাবার মৃত্যু হয়।

হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদ বলেন, কনে বিয়ের সাজে প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউসের দ্বিতীয় তলায় বসেছিল। বরপক্ষ এবং অন্য আত্মীয়রা তখন ভোজনে ব্যস্ত।

ঠিক ওই সময় শুটিং হাউসের পেছনের দরজা দিয়ে দ্বিতীয়তলায় উঠে যায় বখাটে সজীব। বিয়ের আসরে গিয়ে কনেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এ সময় কনের বাবা-মা বাধা দিলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ছুরিকাঘাত করে। ওই যুবক এখন পুলিশের হেফাজতে আছে।

পুলিশ জানায়, ওই যুবকের বিরুদ্ধে কনের বাবা তুলা মিয়া গত মার্চে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় সে এক মাস জেলও খেটেছে। মাদকাসক্ত ওই যুবক জেল খেটে কিছু দিন আগে ছাড়া পেয়েছে।

বিয়ের খবর শুনে বুধবার কনের বাড়িতে এসে বাবা তুলা মিয়াকে হুমকি দেয়। এ সময় সজীব বলে, অন্য কোথাও মেয়ের বিয়ে দিলে ভালো হবে না। ওর বিয়ে যদি হয় আমার সঙ্গেই হতে হবে। আর তা না হলে আমি সব তছনছ করে দেব।

প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, বখাটে সজীবের সঙ্গে কনে স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তখন থেকেই সজীব তাকে উত্ত্যক্ত করত। সজীবের উত্ত্যক্তের কারণেই ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে মেয়েকে মিরপুর তার খালার বাসায় পাঠিয়ে দেন বাবা তুলা মিয়া। সেখানেও বখাটে সজীব তাকে উত্ত্যক্ত করত। এক পর্যায়ে আতঙ্কে মেয়েকে টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার।

কয়েক মাস আগে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এলে আবারও সজীব পিছু নেয়। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তুলা মিয়া সজীবের বিরুদ্ধে গত মার্চে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন।

ওই মামলায় সজীব জেলও খেটেছে। সজীবের বাবার নাম বারেক মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির পাছগাছিয়া গ্রামে। সে দিলু রোড এলাকায় থাকে।

তবে বখাটে সজীব পুলিশের কাছে দাবি করেছে, মেয়েটির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবার তা মেনে নিচ্ছিল না। প্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে সজীব নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।

এ কারণে সে বিয়ের আসরে হাজির হয়ে কনেকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এতে বাধা দেয়ায় সে মেয়ের বাবা-মাকে কুপিয়ে জখম করে। সজীবের সঙ্গে কনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল- এ দাবির সত্যতা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আনিসুর রহমান বলেন, ‘বখাটে সজীব’ নিজেকে তুলা মিয়ার মেয়ের প্রেমিক দাবি করে। মামলায় সাজা খেটে কিছু দিন আগে ছাড়া পাওয়ার পর তুলা মিয়ার মেয়ের বিয়ের কথা জানতে পারে।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে চাকু নিয়ে বিয়ের আসরে ঢুকে তুলা মিয়া এবং তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কোপায়। আশপাশের লোকজন তাকে ধরে ফেলে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029728412628174