২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
তবে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ হিযবুত তাহরির ও ইসলামী ছাত্রশিবির বুয়েট ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আবরার ফাহাদের আবেগ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হয়েছে। এমন অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আজ শনিবার বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনার পাদদেশে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন— কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ ও ২১ ব্যাচের অর্ঘ দাস এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীল।
এ সময় আরও ২০–২৫ জন উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বুলিংয়ের ভয়ে তাঁরা অংশ নেননি বলে দাবি করেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্য শিক্ষার্থীদের ‘বুলিংয়ের’ কিছু স্ক্রিনশট তুলে ধরেন তাঁরা।
লিখিত বক্তব্যে আশিক আলম বলেন, ‘বুয়েটের সংবিধানে ক্যাম্পাসে সকল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে আইন আছে আমরা তাকে সম্মান করি। তবে এই সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে হিযবুত তাহ্রির, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো কাজ করছে। আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় আমরাও দুঃখিত। তবে সে ঘটনার আবেগকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি আরও বলেন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সুনামগঞ্জে বুয়েটের ৩৪ শিক্ষর্থীকে গ্রেপ্তার করা হলে আমরা মৌলবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করি। সে ঘটনায় আমাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয় এবং ৭০-৮০ জন মিলে ডেকে ‘কালচারাল র্যাগিং’ দেয়া হয়। কারও পরিবার আওয়ামী লীগের, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলে তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পরিবার নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হয়। তাঁদের নিয়মিত র্যাগিং, বুলিং, হুমকি ও ভয়ভীতির মধ্যে জীবন কাটাতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘একবার আমরা বন্ধুবান্ধব ও সিনিয়র-জুনিয়র মিলে ক্যাফেটেরিয়ায় কাচ্চি রান্না করে খাই। সেটিকে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আমাদের সকল গ্রুপ ও ক্লাব থেকে বের করে দেয়া হয়। শিক্ষা উপকরণ দেয়া বন্ধ করে দেয়। ভালো খেলা সত্ত্বেও সব ধরনের খেলা থেকে বাদ দেয়া হয়। আমাদের র্যাগার, খুনি, মাদকাসক্তসহ আরও অপবাদ দেয়া হয়।’
সম্প্রতি ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনে ইফতার বিতরণ একই অপবাদ দেয়া হয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা এবং আমাদের ওপর একের পর এক আক্রমণ—এটাই প্রমাণ করে যে ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসে এখন প্রায় প্রকাশ্যেই হিযবুত তাহ্রির তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং সেই নিষিদ্ধ সংগঠনের মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিল করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ ব্যবহার করে। আমদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধানে উল্লেখ থাকা আমাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়।’
সংবিধানের আলোকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা প্রদান, স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তাঁরা।
অপর দিকে বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ সভাপতিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বি ও তাঁর সহযোগীদের স্থায়ী বহিষ্কার, সিট বাতিল ও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে।