টানা ভারীবর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানিতে দেশের ১১টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি নিয়ে দুই রকমের পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশব্যাপি মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বৃষ্টি কমে আসবে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উজানে বৃষ্টি কমেছে এবং সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারতে পানি কমছে। এর প্রভাব দেশেও পড়বে। অন্যদিকে সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী রোববার পর্যন্ত দেশের আট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে। তবে পাঁচ দিনের বর্ধিত পূর্বাভাসে বৃষ্টি কমতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে।
এক নজরে নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস পাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে।
এদিকে একই সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী তিন দিনে এ বৃষ্টি কমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
বন্যাকবলিত এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বিভাগসহ কিছু অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
নদীবন্দরের জন্য ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে, আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
এদিকে এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতধর্মী পূর্বাভাসে বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। সেই সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন স্বেচ্ছাসেবক ও ত্রাণ নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
ফেনীতে ত্রাণ দিতে যেতে ইচ্ছুক নোমান মোর্সেদ বলেন, আজ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস দেখে টিমসহ ত্রাণ নিতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস দেখে একটু বিচলিত হয়ে পড়েছি। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে সেনাবাহিনীর সহয়তা নিবো।