দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: গত সোমবার হাইকোর্টের এক আদেশ অনুযায়ী ২ রা মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা। এ বিষয়ে আদালত শিক্ষাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলেছেন। আবার অন্তর্বতীকালীন আদেশও দিয়েছেন। একজন আইনজীবীর বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হাইকোর্টের এমন রুল ও আদেশের তথ্য অনুযায়ী ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা চলবে, বিশ্ববিদ্যালয়ও চলবে। তবে, বন্ধ রাখার বিষয়ে আদালতের আদেশের কোনো কপি রুলের বিবাদী শিক্ষাসচিবের কাছে বুধবার রাত নয়টায়ও পৌঁছায়নি।
এমতাবস্থায়, বৃহস্পতিবার স্কুল খোলা কিনা জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব সোলেমান খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘হাইকোর্টের কোনো আদেশ পাইনি।’
এদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেছেন, আমাদের রেগুলেটরি বডি হলো মন্ত্রণালয়। অতীতে সব সময় দেখেছি আদালতে আদেশ অনুযায়ী কিছু বাস্তবায়ন করার আদেশ করা হলে তা উল্লেখ করা থাকে যে এটা আদালতের আদেশ অনুযায়ী। কি‘ন্তু শিক্ষাসচিব যেহেতু আদালতের একটি বেঞ্চের বরাতে জনৈক আইনজীবী ‘বর্ণিত ২রা মে অবধি সব স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা বন্ধে’র কোনো আদেশ পাননি, তাই আমরা স্কুল-কলেজ খোলা রাখবো।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, স্কুল-কলেজ খোলা রাখলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার যুক্তি কম। কারণ, শিক্ষাসচিব এখনো আদালতের আদেশ পাননি। বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখার কোনো নির্বাহী আদেশ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান রিস্ক নিতে চান না। তারা বৃহস্পতিবার খোলা রাখবেন। আবার কোথাও কোথাও জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। কয়েকজন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, যেহেতু শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বলেছিলেন আপিল করবেন না, নীরবতা সম্মানের লক্ষণ।’
একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বুধবার রাত দশটার দিকে বলেন, ‘তাহলে আমরা মন্ত্রী বর্ণিত ‘হাইকোর্টের আদেশের প্রতি সম্মান দেখানোকে ভিত্তি ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছি, যেহেতু প্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানতে চান, কী করবেন?
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা চলবে আর বাংলা মিডিয়াম সব বন্ধ থাকবে-- এটা বৈষম্যমূলক মনে হতে পারে।
এমতাবস্থায় ১ মে বিকেল থেকে শিক্ষক নেতারা এবং অনেক অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক জানতে চেয়েছেন, বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান খোলা না বন্ধ রাখবেন। তাদের যুক্তি হলো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরগুলো থেকে বন্ধের কোনো আদেশ পাননি। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার বরাতে গণমাধ্যমেও কোনো আদেশের খবর জানা যায়নি। তবে, ভিকারুননিসাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একজন আইনজীবীর বরাতে পাওয়া হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও বন্ধ রাখবেন।
এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে কি আদালত অবমাননা হবে? কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান এমন প্রশ্ন করেছেন দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর কাছে। অথবা বন্ধ রাখলে মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য হবে কি-না?
গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত আদেশের খবর গণমাধ্যমে আসার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, আদেশের কপি এখনো হাতে পাননি। পেলে সিদ্ধান্ত নিবেন। পরে আবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে না। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এমন তথ্যই জানিয়েছিলেন। এর আগে গত সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি আদেশে বলেছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং মাদরাসার ক্লাস আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
ওই আদেশের পর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে সংবিধান অনুসারে সেটা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।সংবিধানের রুলস অব বিজনেসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই এখতিয়ার দেয়া হয়েছে।
আমাদের উচ্চ আদালতের সুয়োমটো, কিছু বিষয়ে নির্দেশনা বা আদেশ দেয়ার এখতিয়ার আছে।
সেটাও সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু, রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানের যে এখতিয়ার, সেখানের মধ্যে থাকাটাই সবার জন্য সমীচীন।
এদিন তিনি আরো বলেন, যে বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক এখতিয়ার আছে, সেখানে এ বিষয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত (আদালতে) হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আমরা তার উপরের আদালতে, আপিল বিভাগে যাবো। একটু আগে শুনেছি আদালত একটা নির্দেশ দিয়েছে।
মহিবুল হাসান চৌধুরী আরো বলেন, যেসব জেলায় তাপমাত্রা অনেক বেশি সেসব জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ বিষয়টা নিয়ে ইতোমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। কিন্তু, যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেসব জেলায় তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কোনো যুক্তি নেই-এটা হচ্ছে আমাদের নির্বাহী অবস্থান।
মন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, যেসব জায়গায় তাপমাত্রা ৩৯- ৪০ এর ঘরে পৌঁছাচ্ছে না সেসব জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কেনো? যেমন এই মুর্হূতে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেনো বন্ধ থাকবে?