খুলনার শিপইয়ার্ড এলাকার হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া কলেজের ষাটোর্ধ্ব অধ্যক্ষকে বেআইনিভাবে পুনঃনিয়োগ নিয়ে অভিযোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই শিক্ষকের ওপর হামলা হয়েছে। যদিও, ৬০ বছর হওয়ার পর অধ্যক্ষকে পুনঃনিয়োগ দেয়ার বিধান নেই। তবুও, গত ৩১ জুলাই দায়িত্বের পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও এক বছরের জন্য কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ দেলোয়ারা বেগমকে আবারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের ওপর শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) হামলা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ অধ্যক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছেন।
কলেজের শিক্ষক প্রসেনজিৎ গাইন অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষা শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজের শশাঙ্ক মল্লিক ও গোলাম কিবরিয়া শনিবার সকালে কলেজের পাশের একটি চার দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে তাদের ওপর হামলা করেছেন। তাদের মারধর করা হয়েছে। এ সময় তাদের বাঁচাতে কয়েকজন শিক্ষক ছুটে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়েছে। আমরা অভিযোগ দিতে লবনচরা থানায় এসেছি।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, অধ্যক্ষ বেআইনিভাবে পুনঃনিয়োগ নিয়েছেন তা জানিয়ে খুলনার আঞ্চলিক পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলাম। সেখান থেকে কেউ আমাদের পরিচয় অধ্যক্ষকে জানিয়েছে। 'হামলাকারীরা মারধরের সময় বলেন, তোদের এত বড় সাহস তোরা প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিস।'
শিক্ষকরা অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গত ৩১ জুলাই অধ্যক্ষ দেলোয়ারা বেগমের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর বিধিবহির্ভূতভাবে অধ্যক্ষ পদে তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গভর্নিং বডি পহেলা আগস্ট থেকে এক বছরের জন্য তাকে পুনঃনিয়োগ দিয়েছেন। যদিও ৬০ বছর হওয়ার পরে পুনরায় অধ্যক্ষকে কলেজে নিয়োগ দেয়া বিধিবহির্ভূত। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একাধিক অধ্যক্ষকে বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ায় দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়ে আদেশও জারি করা হয়েছে। এসব জানিয়েই আমরা খুলনারর আঞ্চলিক পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, বিধি বহির্ভূতভাবে অধ্যক্ষ পদে পুনরায় নিয়োগ নিয়ে অন্য শিক্ষকদের হয়রানিমূলকভাবে শোকজ করেছেন অধ্যক্ষ। যা তিনি পারেন না। তাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে মেয়াদ বাড়িয়েছেন। কিন্তু তিনি অধ্যক্ষ পদেই আছেন।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে জারি করা এক পরিপত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, বয়স ষাট বছর পূর্ণ হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও দেয়া হবে না। এছাড়া বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে ছাড়তে হবে দায়িত্ব। ষাটোর্ধ শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো অবস্থাতেই পুনঃনিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যাবে না। বিধান না মানলে পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত বছর শিক্ষাও বোর্ডগুলো এ নির্দেশনা জারি করেছিল।
অভিযোগের বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে দেলোয়ারা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'আমার কলেজের কোন শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে বলে আমি জানি না। হামলা বা মারধরের বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না।'
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমার মেয়াদ বাড়িয়েছে। সে মোতাবেক অধ্যক্ষ পদে আছি। তবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কবে অধ্যক্ষ পদে আপনার মেয়াদ বাড়িয়ে আদেশ জারি করেছে-তা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। হঠাৎ ফোনটি কেটে দেন অধ্যক্ষ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ ঢাকায় গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেয়াদ বাড়িয়ে কাগজপত্র নিয়ে এসেছেন। সে প্রেক্ষিতে তাকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে লবণচরা খানার ওসি সমির কুমার বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখছি।