পনেরো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও নেই। তবুও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নেই কোন অবহেলা। বছরের পর বছর জীর্ণ টিনশেডের ঘরে চলছে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানদের আলোকিত করে গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞ।
শিক্ষকদের নিরলস চেষ্টায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার জিসিবি আদর্শ কলেজ। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজটির মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ৮৫ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে মানবিক বিভাগের তিনজন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের শতভাগ পাস করা ছয়টি কলেজের মধ্যে একটি এই কলেজটি। শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করা এই কলেজে চলছে আনন্দের বন্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের পাশে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি কলেজটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ভাল ফল করছে কলেজটি। এর আগে ২০১৬ ও ২০১০ খ্রিস্টাব্দে শতভাগ পাসের কৃতিত্ব দেখায় কলেজের শিক্ষার্থীরা। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ৯৮ শতাংশ, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এছাড়া অন্যান্য বছরের ফলাফলে কলেজটি ৮০ শতাংশের উপরে পাস করেছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় আনন্দের বন্যা বইছে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে।
এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থী শারমিন খাতুন ও হৃদয় হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায়ই আমরা এই ফল করতে পেরেছি। আমরা এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেলেও স্যারদের আন্তরিকতা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এইচএসসিতে এই ফল করতে পেরেছি। আমরা আমাদের শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়া করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।
জিপিএ-৫ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী রত্না খাতুন বলেন, ধারাবাহিকভাবে ভাল ফল করার কারণেই জিপিএ-৫ পাওয়ার পর অন্যান্য নামকরা কলেজ রেখেও জিসিবি আদর্শ কলেজে ভর্তি হই। তখন অনেকেই আমাকে এই কলেজে ভর্তি না হতে পরামর্শ দিয়েছিল। ভাল ফলের জন্য আমি আমার শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কলেজটির অধ্যক্ষ আবু জাফর দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমার শিক্ষকরা কোন বেতন পান না। তারপরও তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ধারাবাহিকভাবে ভাল ফল করতে ভূমিকা রেখে চলেছেন। কয়েকটি টিমে শিক্ষকদের ভাগ করে দেয়া আছে। প্রতি টিমে ১৫-২০ জন করে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব পালন করেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খোঁজখবর রাখেন। কোন শিক্ষার্থী তিন দিন কলেজে না এলে তার অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ক্লাসে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
অধ্যক্ষ আবু জাফর আরও বলেন, কলেজটিতে আধাপাকা টিনশেড ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। যে টিন শেড তিনবার ঝড়ে উড়ে গেছে। তবে এবার সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির শিক্ষামন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেছেন কলেজটিকে একটি ভবন প্রদানের জন্য। আশা করছি চলতি বছরই ভবনের কাজ শুরু হবে। এছাড়া এমপি গত অর্থবছরে ভবন মেরামতের জন্য ৫ লাখ টাকা প্রদান করেছেন, যা দিয়ে কলেজে একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।