দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিটটি দায়ের করেন। রিটে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এটির শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
রিটে দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
এর আগে রোববার (২১ এপ্রিল) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চেয়ে দুদকে আবেদন করেন সংসদ সদস্য (এমপি) ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। লিখিত ওই আবেদনে সাবেক আইজিপির দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চান তিনি। পাশাপাশি দুদক কোনো ব্যবস্থা না নিলে, উচ্চ আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের অস্বাভাবিক সম্পত্তির বিষয়টি গত ১ মাস ধরে আলোচনায়। ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালের কণ্ঠ। দুদিন পর ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে আরেকটি খবর প্রকাশ হয় ওই দৈনিকে। সাবেক আইজিপিকে নিয়ে এমন খবর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও নিশ্চুপ ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
এসব দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে সুমন যা সাংবাদিকদের জানান-
দুদকে তদন্ত চেয়ে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, বড় জিনিস দেখলে দুদক চুপসে যেতে চায়, ধাক্কা দিলেও স্টার্ট হয় না। বেনজীরের বিরুদ্ধে তদন্ত না হলে, পুলিশের সৎ কর্মকর্তারাও হতাশ হবেন। নতুন এমপি হওয়ার কারণে আমাকে ন্যাম ভবনে রুমও কম দেয়া হয়েছে। জীবন-যৌবন ঝুঁকিতে ফেলে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি মানুষের সামনে এনেছি। কতটুকু করতে পারবো জানি না, তবে বলতে পারবো, আমি চেষ্টা করছি।
প্রকাশিত সংবাদে যে সব অভিযোগ উঠেছে বেনজীর বিরুদ্ধে -
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। জাতীয় ওই দৈনিকে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।
অভিযোগের বিপরীতে ফেসবুক লাইভে যা বলেছেন বেনজীর-
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ফেসবুক লাইভে এসে সব অস্বীকার করেন সাবেক আইজিপি। শনিবার (২০ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে প্রথমবারের মত ব্যাখ্যা দেন তিনি। এ সময় দুর্নীতির অভিযোগ অসত্য, কাল্পনিক বলে দাবি করেন তিনি।
পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে সম্পত্তি লিখে দেয়ারও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা।
সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমার পরিবার ও আমার নামে অসত্য প্রকাশিত হয়েছে। তিলকে তাল বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সংবাদের সূত্র ধরে অন্যান্য কতিপয় আউটলেট একই রকমের সংবাদ পুনরাবৃত্তি ক্রমে পরিবেশন করেছে। তবে দেশের মূলধারার প্রিন্ট এবং মিডিয়া এই অসত্য, মানহানিকর এবং বিকৃত সংবাদ পরিবেশনে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। এজন্য মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর সাংবাদিক বন্ধুগণের প্রতি আমি এবং আমার পরিবারের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।’
তাদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে গোপন বা আড়াল করার কোনও সুযোগ নেই। ঢাকার কাছে বিঘার পর বিঘা কোনও জমি নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই। পূর্বাচলে সেই কথিত ডুপ্লেক্স বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরও ১০ বিঘা জমিও নেই।’
তিনি বলেন, ‘মগবাজার কেন, রমনা, সিদ্ধেশ্বরী এর আশপাশে আমাদের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিছুই নেই। আনন্দ হাউজিংয়ে একটি প্লট বুকিং দিই এবং কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই টাকা পরিশোধ করি।’
ভাওয়াল রিসোর্ট, বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং হোটেল রামাদায় বেনজীরের পরিবারের মালিকানা আছে বলে প্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। পদ্মা ব্যাংক এবং ক্যানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনও মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি মর্মে যা বলা হয়, সেটাও অসত্য।’
ব্যারিস্টার সুমনের দেয়া চিঠির বিষয়ে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের মতে, সুমনের আবেদন ও সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এক্ষেত্রে ব্যক্তি কোনো মুখ্য বিষয় না।
তবে গত ৮ এপ্রিল এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, পত্র-পত্রিকায় যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে সত্যতা যাচাই করতে হবে। দুদক জিন-পরী নয়, আসলো আর ফুঁ দিয়ে দিলাম। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।