বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের আইনকানুন মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, যেকোন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে উপাচার্যদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আপনারা বিদ্যমান আইনকানুন মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করুন। যেকোন সমস্যায় পড়লে আমাদের লিখিতভাবে জানান। কিন্তু বেনামে চিঠি লিখবেন না। আপনাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করুন। আপনাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার কেউ ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করলে ইউজিসি আপনাদের পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।
বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়নে উপাচার্যদের সঙ্গে এক মতবিমিনয় সভায় তিনি উপাচার্যদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন জানান। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সভায় রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া ৬৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অংশগ্রহণ করেন এবং উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
স্থায়ী ক্যাম্পাস বিষয়ে প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পার হলেও যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে গড়িমসি করছে বা কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যথাযথ প্রক্রিয়া শেষ করে বিভাগ খোলা ও ছাত্র ভর্তি করারও তিনি পরামর্শ দেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি পদ্ধতি ও শৃঙ্খলা দাঁড় করাতে ট্রাস্ট্রি বোর্ড ও উপাচার্যদেরকে উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রফেসর বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্যরা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী কাজ করতে উপাচার্যরা যেন দ্বিধা বোধ না করেন সে বিষয়ে তিনি সজাগ থাকার আহ্বান জানান। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে গঠনমূলক পরামর্শ দেয়ারও অনুরোধ করেন।
তিনি আরো বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগে জট খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববদ্যিালয়ে উপাচার্যদের ক্ষমতায়নে ইউজিসি কাজ করছে এবং বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে উপাচার্যদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববদ্যিালয়ে অভিন্ন গ্রেডিং এবং ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণে কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন এবং ব্যয় কমাতে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে সমাবর্তন আয়োজন করার আহ্বান জানান। ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ন্যূনতম কোটা যথাযথভাবে অনুসরণের আহ্বান জানান। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববদ্যিালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে ইউজিসির মনিটরিং সেল জোরদার করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মতবিনিময় সভায় উপাচার্যরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবর্তন করা, শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া ক্ষমতা দেয়া, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা লাঘব করা, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উপাচার্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্ৰহণে উপাচার্যদের মতামত গ্ৰহণ করা, অভিন্ন গ্ৰেডিং পদ্ধতি চালু করা, ন্যূনতম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া, চাকরি প্রবিধান-বিধিমালা প্রণয়ন, কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন, আইন বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ও আসন সংখ্যা নির্ধারণে আইন অনুযায়ী ইউজিসির একক নির্দেশনা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা নেটওয়ার্ক তৈরি, গবেষণায় বিদেশি ফান্ড দ্রুত ছাড় করা, যৌথ ডিগ্রি ও প্রোগ্রাম এক্সচেঞ্জ করার সুযোগ দেয়া, পেরিফেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সংকট দূরীকরণে ব্যবস্থাগ্রহণ ও আশুলিয়াকে এডুকেশন সিটি ঘোষণা করার দাবি জানান।
কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ সভায় বক্তব্য দেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইউজিসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।