টানা তিন মাস পর ক্লাসে ফিরেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার শুরু হয়েছে পাঠদান। এতে করে প্রাণচাঞ্চল্য হয়েছে ক্যাম্পাস। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পাঠদান শুরু হলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন ও খোঁজ-খবর নেন। দীর্ঘসময় পর হলেও আবারও ক্লাসে ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে। আমরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় ফিরছি। কিন্তু, সবচেয়ে বেদনার বিষয় হচ্ছে আমাদের ভাই শহীদ আবু সাঈদ আর কখনোই ক্লাসে ফিরবেন না। তাকে ছাড়া বিভাগে এসে ক্লাস করাটা কতোটা শূন্যতা অনুভব করি, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। দুই হাত টান করে বুক চিতিয়ে দেয়া আবু সাঈদকে কাছ থেকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে সেই দৃশ্য মনে হলে কিছুটা নিস্তব্ধ হয়ে যাই, নির্বাক হয়ে যাই।
শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আবু সাঈদ ভাই যাকে আমরা সবসময় বিপদে-আপদে পাশে পেতাম। কিন্তু আজ তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। গত ১৬ জুলাই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আবু সাঈদ ভাইয়ের বসার চেয়ারটাও এখনো ফাঁকা পড়ে আছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেব, এতো দীর্ঘ আন্দোলনের পর আমরা আবার সবাই পড়ালেখায় ফিরে যেতে চাই এবং আমরা চাই একাডেমিক সকল কাজ যেনো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হয়। তার সঙ্গে আমরা যাই যে কারণে এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন দেশে হলো তার উদ্দেশ্য যে আমরা সকলে সফল করতে পারি। তার সঙ্গে আমরা নতুন ভিসির কাছে যেসব যৌক্তিক দাবি দিয়েছি সেগুলো যেনো পূরণ করার পদক্ষেপ দ্রুত নেয়া হয় সে আশা করছি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, নতুন বাংলাদেশে টানা তিন মাস পর ক্লাস শুরু হলো। সামনে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্লাস গ্যাপ পূরণে পরিকল্পনা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, আবাসিক হল ও শিক্ষক সংকট দূরকরণ নিয়ে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে।
এ সময় সকলের সহযোগিতাও চান অধ্যাপক ড. শওকাত আলী। তিনি বলেন, আপনাদের জন্য আমার দরজা খোলা যেকোনো সমস্যা, অভিযোগ সরাসরি আমাকে জানাবেন। সোস্যাল মিডিয়ায় নয়। সবাই একটা ভয়াবহ মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
এর আগে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০৭তম জরুরি সভায় অ্যাকাডেমিক কার্যকমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
চলতি বছরে পহেলা জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বন্ধে হয়ে যায় একাডেমিক কার্যক্রম। এর মাঝে শুরু হয় কোটা সংস্কারের আন্দোলন। গত ১৬ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা করা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশ দিন পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং হাসিনা সরকারের পতনে ৬ আগস্ট খোলে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হলেও স্থবিরতায় ছিলো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। এবার সেই অ্যাকাডেমিক স্থবিরতা কাটলো।