বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় ভারতীয় নারী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় একজন ভারতীয় নারীর অংশীদারিত্বের খবরে তোলপাড় দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গণ। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি দিয়েছে। আইনে নিষিদ্ধ হলেও সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হয়েছেন একজন ভারতীয় নারী। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে হইচই অবস্থা। ইতিমধ্যে ঘটনা জেনেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনও। নির্দেশ দেয়া হয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বাদ দেয়ার।   

জানা গেছে, লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি রাগীব আলী। ওই ভারতীয় নাগরিক ও নাবালক একজনকে বাদ দিয়ে নতুন করে ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠনের জন্য গত ১২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। ইউজিসির পরিচালক মো. ওমর ফারুখ দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইউজিসি বলছে, ট্রাস্টি বোর্ডে থাকা ওই ভারতীয় পাসপোর্টধারী নাগরিক হলেন সাদিকা জান্নাত চৌধুরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলীর ছেলে সৈয়দ আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী। সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ভারতের আসাম প্রদেশের কাছার জেলার সোনাইমুখ তোলাগ্রামের শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও রত্না চৌধুরীর মেয়ে।

জানা যায়, শিল্পপতি রাগীব আলীর ছেলে সৈয়দ আব্দুল হাই প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ভারতীয় নাগরিক সাদিকাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হন সাদিকা। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর রেজিস্ট্রি অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের সময় তার ঠিকানা মালনীছড়া চা-বাগান উল্লেখ করা হয়। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে, বিদেশি নাগরিকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে সাদিকার শ্বশুর বা স্বামীর ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। পরিচয় গোপন করার জন্য অবৈধভাবে তৈরি করা জন্মনিবন্ধনে ব্যবহৃত মালনীছড়া চা-বাগানের ঠিকানা দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ দাবি করে এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা ইউজিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়িয়েছে। 

জানা যায়,  বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডকে অবৈধ দাবি করে ও লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য  কাজী আজিজুল মাওলা ইউজিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য  সাদিকা জান্নাত চৌধুরী (পাসপোর্ট নং K 3920850) ভারতের নাগরিক বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান রাগিব আলীও উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইউজিসিতে অভিযোগ দেন। 

অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে ড. কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত ২৭ জুলাই ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। এসময় তারা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাগীব আলী, উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা ও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকর সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন। তদন্ত শেষে ১২ নভেম্বর ইউজিসির পরিচালক মো. ওমর ফারুক বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। 

সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের বহিস্কৃত দুই শিক্ষককে পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই সঙ্গে ট্রাস্টিবোর্ড থেকে ভারতীয় নাগরিকসহ দুজনকে ২ মাসের মধ্যে বাদ দিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনেরও নির্দেশনা দিয়েছে। চিঠিতে  ভারতীয় নাগরিক সাদিকা জান্নাত চৌধুরী ও নাবালক সাইদ আজমাইন আবদুল হাইকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থেকে বাদ দিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ও আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনিরীক্ষিত অর্থ বছর-এর নিরীক্ষা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।

জানা যায়, কোম্পানি আইনের নিয়মে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোর্ডের নিবন্ধন না করায় দীর্ঘ ১৬ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৯ অনুযায়ী সরকারি সনদ গ্রহণ করা হয়নি।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি বহিষ্কার প্রসঙ্গে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লিডিং ইউনিভার্সিটি'র বিভিন্ন অনিয়ম এবং বিশ্ববদ্যিালয়টির উপাচার্য এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পরস্পরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্তে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, লিডিং ইউনিভার্সিটি'র আর্কিটেকচার বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা জারিনা হোসেইন এবং সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাস এর বহিষ্কারাদেশ বাতিল ঘোষণা করে সব সুযোগ সুবিধাসহ বহিস্কারাদেশ সাক্ষরের তারিখ হতে স্বপদে পূর্নবহাল করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেইসঙ্গে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর কোনো এখতিয়ারবলে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তার কারণ দর্শানোসহ ব্যাখ্য তিন  কার্য দিবসের মধ্যে কমিশনে পাঠাতে বলেছে ইউজিসি। এ ছাড়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলাকে চুক্তি অনুযায়ী বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

ওই চিঠিতে সকল বিভাগে আগামী তিন মাসের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৩(৩) ধারা মোতাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আপত্তি ওঠায় গত আগস্টে সাদিকা জান্নাতসহ তিনজনকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বাদ দেয়া হয়।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে দুই শব্দে অধ্যক্ষের পদত্যাগ! - dainik shiksha দুই শব্দে অধ্যক্ষের পদত্যাগ! বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে পাকিস্তান - dainik shiksha বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে পাকিস্তান বিএনপি নির্বাচিত হলে গুম প্রতিরোধে আইন করব: তারেক - dainik shiksha বিএনপি নির্বাচিত হলে গুম প্রতিরোধে আইন করব: তারেক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলীর মৃত্যু শ্বাসরোধে: মেঘালয় পুলিশ - dainik shiksha ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলীর মৃত্যু শ্বাসরোধে: মেঘালয় পুলিশ ঢাবিতে যোগ দিলেন চাকরিচ্যুত অধ্যাপক ড. সাইফুল - dainik shiksha ঢাবিতে যোগ দিলেন চাকরিচ্যুত অধ্যাপক ড. সাইফুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051240921020508