বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে প্রভাষক দিয়েই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মানসম্মত উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাদের প্রয়োজনীয়সংখ্যক অধ্যাপক নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আবার খণ্ডকালীন। মূলত প্রভাষক দিয়েই চলছে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যগুলোতে পিএইচডিধারী শিক্ষক খুঁজে পাওয়াই কঠিন। পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যাও দিন দিন কমছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাদের ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৮ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওই বছর তাদের মোট শিক্ষক ছিল ১৬ হাজার ৭৪ জন, যাঁদের মধ্যে পূর্ণকালীন ১১ হাজার ৭২২, আর খণ্ডকালীন চার হাজার ৩৫২ জন। পূর্ণকালীন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক মাত্র ৮৩৫ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৭৩৬, সহকারী অধ্যাপক দুই হাজার ৮৭০, প্রভাষক সাত হাজার ৫১ জন এবং অন্যান্য ১৮৫ জন। আর খণ্ডকালীন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক এক হাজার ৩১২ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৬৪৪ জন, সহকারী অধ্যাপক ৭৮৮ জন, প্রভাষক এক হাজার ৪০১ জন এবং অন্যান্য ২০৭ জন।

জানা যায়, মূলত প্রভাষক দিয়েই চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ণকালীন অধ্যাপকের বেশির ভাগই বড় চার-পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত চলছে নামকাওয়াস্তে দু-চারজন অধ্যাপক দিয়ে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণকালীন অধ্যাপকের চেয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপকের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে দক্ষ শিক্ষকদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩৫(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষকসংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারবে না। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই মানছে না এই আইন। এমনকি পূর্ণকালীন অধ্যাপকের চেয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপক বেশি।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষক ছিলেন চার হাজার ৭২২ জন। তাঁদের মধ্যে পূর্ণকালীন তিন হাজার ৯৮১, আর খণ্ডকালীন ৭৪১ জন।

ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অনেক বিশ্ববিদালয়ে কোনো স্থায়ী অধ্যাপক ছিলেন না। আবার দু-চারজন অধ্যাপক দিয়ে চালানো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক। অথচ ঠিকই শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দিয়ে যাচ্ছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ওই বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজে কোনো স্থায়ী অধ্যাপকই ছিলেন না।

প্রতিবেদন মতে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপক ছিলেন এক-দুজন। তাঁদের মূলত উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরাই অধ্যাপক। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে স্থায়ী অধ্যাপক ছিলেন মাত্র একজন, দ্য পিপল’স ইউনিভার্সিটিতে দুজন, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটিতে দুজন, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ায় তিনজন, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্সেসে তিনজন, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে তিনজন, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে দুজন, ফেনী ইউনিভার্সিটিতে একজন, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটিতে তিনজন, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে তিনজন, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সে তিনজন, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে তিনজন, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে তিনজন এবং আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটিতে মাত্র দুজন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট পিএইচডিধারী শিক্ষক ছিলেন তিন হাজার ১২০ জন। তাঁদের মধ্যে পূর্ণকালীন এক হাজার ৫৪৬ জন এবং খণ্ডকালীন এক হাজার ৫৭৪ জন। তবে মোট পিএইচডিধারী শিক্ষক ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় ছিলেন ২৯৬ জন কম। সর্বোচ্চসংখ্যক পিএইচডিধারী শিক্ষক ছিলেন নর্থ সাউথে ৪১৮ জন। এ ছাড়া ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ছিলেন ১৭৩ জন করে, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ছিলেন ১৫২ জন এবং ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজে ছিলেন সর্বনিম্ন একজন পিএইচডি শিক্ষক। ৪১৮ জন নারী পিএইচডিধারী শিক্ষকের মধ্যে পূর্ণকালীন ছিলেন ২৯৪ জন আর খণ্ডকালীন ১২৪ জন।

প্রতিবেদন মতে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ছিল ১:৩০। তবে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চিটাগাংয়ে ১:৮৫ এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসে ১:৬৬ ছিল।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা সব সময়ই আইন মেনে চলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলে থাকি। তবে অনেক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেখানে ইচ্ছা করলেও অধ্যাপক খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম, ফলে তারা বেশি অধ্যাপক রাখতেও পারে না। তবে আমাদের সরকারি কোনো সহায়তা নেই। সরকার কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা করলে আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029640197753906