দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : মানহীন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো আর শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পরিচালনা বিধিমালায় পরিবর্তন আনছে সরকার। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোকে মূল্যায়নের সুযোগও সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৫০টি সূচকে মোট ১০০ নম্বরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মূল্যায়ন হবে। এ সূচকে ২৫ নম্বরের কম পাওয়া প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ও কলেজ বন্ধের সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানতে চাইলে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আইন লাগে। সম্প্রতি আইন তৈরি হয়েছে। তবে এতে সব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে না। এজন্য আমরা একটি বিধিমালা এবং প্রবিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এটি তৈরি হলে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তখন কেউ চাইলেই আইন পাশ কাটিয়ে মেডিক্যাল কলেজের নবায়ন নিতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, বিধিমালায় ৫০টি সূচকের মাধ্যমে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোকে মূল্যায়ন করবো। মূল্যায়ন সূচকে যারা ২৫ শতাংশের কম নম্বর পাবে তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। সূচক পূরণ না করলে কাউকেই নবায়নের সুপারিশ করা হবে না। শর্ত পূরণ না করায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি মেডিক্যাল বন্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে আইন মেনেই কার্যক্রম চালাতে হবে।
সূত্র জানায়, মূল্যায়নে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেলে শর্ত দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে পরিচালনার জন্য নতুন করে নবায়ন দিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ নম্বর পাওয়া মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শর্ত পূরণ করে পুনরায় আবেদন করতে হবে। নম্বর ৫০ শতাংশের নিচে হলে মেডিক্যাল কলেজগুলোকে নবায়নের সুপারিশ করা হবে না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৭২টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। এর অধিকাংশই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কলেজগুলোতে শিক্ষক কম। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নেই। অবকাঠামোও দুর্বল। পাঠদান ও চিকিৎসাসেবা দীর্ঘদিন ধরে সংকটে ভুগছে। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজের মানোন্নয়নে কঠোর হচ্ছে অধিদপ্তর। নতুন করে বিধিমালা তৈরি করছে সংস্থাটি।
বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব জমি ও ফ্লোরস্পেস থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বিএমডিসি অধিভুক্তি হালনাগাদ, হাসপাতালে ৫০ জন রোগীর জন্য ২৫০টি বিছানা থাকতে হবে। পরবর্তীতে প্রতি একজন শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য ১০টি করে শয্যা বাড়াতে হবে। শ্রেণিকক্ষ, মিউজিয়াম, ল্যাবের পরিসর ও সরঞ্জাম বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া সার্ভিস রুল, অর্গানোগ্রাম, তিন মাস অন্তর গভর্নিং বডির সভা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্কিম কার্যক্রম নিয়মিত হতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০ হতে হবে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ শিক্ষক পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (ফ্যাকাল্টি পর্যায়ের) সম্পন্নকারী হতে হবে। এটি কোনোভাবেই ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পৃথকভাবে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল নির্মাণ করতে হবে।