বেহাল উচ্চ শিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র এদেশে কেমন তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও বাস্তবতাকে অস্বীকার করা সহজসাধ্য নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সাফল্য বর্তমান সরকার আমলে অর্জন হয়েছে বলা যায়। বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতা দূরীভূত হয়নি। বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে উচ্চ শিক্ষার কোন কোন ক্ষেত্রের অবস্থা যে করুণ, তা স্পষ্ট হয় যখন প্রতিবছর আসন শূন্য থাকে। শিক্ষার্থী মেলে না। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে পাস কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন শূন্য থেকে যাচ্ছে।

কারণ শিক্ষার্থীরা এই কোর্সে ভর্তি হতে আগ্রহী হচ্ছে না। তারা জানে, এই কোর্সের শিক্ষার মান সুবিধার নয়। শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পর্যাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষক নেই। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পাঠাগার ও গবেষণাগার। ক্লাস না করে অনেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর সনদ নিয়ে বের হয়েছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু করার পর দুই যুগেও সরকার বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রতিনিধি এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেননি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও উপেক্ষার মাত্রা ছিল তাদের তীব্র। অনেক কলেজে দু’শ’ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন।

তাদের আবার অধিকাংশই এমপিওভুক্ত নন। ফলে যেসব কলেজের নিজস্ব আয় নেই, সেই সব কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। এতে ভাল ও যোগ্য শিক্ষক এসব কলেজে শিক্ষকতা করতে আসেন না। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটের ধকল রয়েছে। তবে সেশনজট কমাতে গিয়ে সিলেবাসের অর্ধেকটা শেষ না করেই কোন কোন ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়। এই পরীক্ষা আবার পিছিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করেছে। মূলত বহুমুখী সমস্যায় জড়িত এসব গুরুত্বপূর্ণ কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে আসন সংখ্যা ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে ভর্তি হয় মাত্র ছয় লাখ একাশি হাজার ৬৩ শিক্ষার্থী। ফলে প্রতিবছর আসন শূন্য থাকে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৭টি। আর স্নাত্তর স্তরে আসন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪০টি। ভর্তি হয় এক লাখ ১৯ হাজার ২৮২ জন। আসন শূন্য থাকে ৫৮ হাজার ৪৮৫টি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রদত্ত এই তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, শুধু পাস কোর্স নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কোর্সের ভর্তির সংখ্যা কাক্সিক্ষত নয়।

দেশের শিক্ষার সার্বিক পরিসংখ্যান, শিক্ষা পরিস্থিতি এবং সমস্যা চিহ্নিত করে সে সম্পর্কে সুপারিশ দিয়ে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ইউজিসির ভাষ্যমতে, দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটলেও মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজ থেকে পাস করা ¯œাতকদের শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে ¯œাতক ডিগ্রীধারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের গুণগত মান আশানরূপ নয়। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতে ২৮ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজ রয়েছে দুই হাজার ২৬০টি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু যে ব্যয় হয় সে তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্যয় কম। ফলে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলে নিজস্ব আয়ে।

সরকার কোন বরাদ্দ দেয় না। দেশে অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সে হারে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। এ ধরনের সুবিধা ছাড়া সাধারণ কলেজগুলোতে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য হচ্ছে, স্থানীয়দের চাপেই গ্রামের কলেজগুলোতে এই কোর্স চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী হয়তো জানেন যে, এসব প্রতিষ্ঠানে সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে উচ্চ শিক্ষার মান নেমে যেতে বাধ্য। শিক্ষার মানোন্নয়নে কোন পদক্ষেপও নেয়া হয় না হলে উচ্চ শিক্ষায় যে বেহাল অবস্থা বিদ্যমান, তা দূরীভূত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত জরুরী ভিত্তিতে সমস্যাগুলো দূর করে শিক্ষার মান বাড়ানো। 

 

সৌজন্যে: দৈনিক জনকণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004925012588501