বৈঠকে শিক্ষক নেতাদের আচরণে লজ্জিত শিক্ষামন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সভায় হট্টোগোল করেছেন শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ। মন্ত্রীর সামনেই একটি শিক্ষক সংগঠন নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান দুই নেতা। এতে বিরক্ত হন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আচরণে আমি লজ্জিত। শিক্ষকদের কাছে এমন আচরণ আশা করিনি।’ 

বুধবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনাকালে এ ঘটনা ঘটে। সভায় অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষক নেতা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বিটিএর সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদও বৈঠক শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ও শিক্ষকদেরকে জানান যে, বৈঠককালে স্বাশিপ এর একজন নেতা আন্দোলনরত শিক্ষকদের স্বাধীনতা বিরোধী অ্যাখ্যা দিয়েছেন। কাওছার শেখ এর তীব্র বিরোধীতা করেছেন মর্মেও সাংবাদিকদের জানান। 

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থানরত শিক্ষকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও আমরা সেখানে গিয়ে দেখি শাহজাহান আলম সাজুর সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতারা সব চেয়ার দখল করে আগেই বসে আছেন। স্বশিপের মহানগর পর্যায়ের এক নেতা আন্দোলনরত শিক্ষকদের স্বাধীনতা বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও ওই সংগঠনের নেতারা সভায় অংশ নিয়ে আমাদের কথা বলতে দেননি। তারা হট্টোগোল করেছেন। আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চেয়ছেন তারা। 

জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এরমধ্যে বুধবার বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আলোচনায় বিটিএ নেতারা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের বেশ কয়েকজন আমন্ত্রণ জানানো হয় শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। 

সভা সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরো জানায়, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচানার এক পর্যায়ে একটি শিক্ষক সংগঠনে আধিপত্য নিয়ে তর্কে জড়ান দুই শিক্ষক নেতা। শিক্ষকদের মাঝে এ ধরণের বিভক্তি কাম্য নয়। মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে তাদের সংযত আচরণ করা দরকার ছিলো। কিন্তু তারা তা করেননি। 

সূত্র আরো জানায়, সভায় এক শিক্ষক নেতা মন্ত্রীকে বলেন, যেসব শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা সবাই স্বাধীনতা বিরোধী। কিন্তু মন্ত্রী এতে বিরক্ত হন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন। ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের কাছে শিক্ষকরা শিক্ষক।    

সভা শেষে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের বিষয়টি গবেষণা ও যাচাই বাছাইয়ে দুইটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, জাতীয়করণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ দুইটি কমিটি গঠন করা হবে। জাতীয়করণের প্রক্রিয়া কিভাবে হবে সে বিষয়ে গবেষণায় এর একটি কমিটি গঠিত হবে। অপর কমিটির গঠিত হবে কি পরিমাণে টাকা খরচ হবে তা যাচাই বাছাই করতে। এ দুই কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে পাওয়া ফল নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না। এ কমিটিগুলো আগস্টের শেষদিকে গঠন করা হবে।

সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা শেখ কাওছার আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের ঘোষণায় আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তবে এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষক নেতা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, মন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট। 

এদিকে বিটিএ সভাপতি বজলুর রহমান আন্দোলন বা বৈঠকে নেই। তিনি অসুস্থ বলে কেউ কেউ বলেছেন। 

 শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে স্বাধীনতা  শিক্ষক পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের কাছে বর্তমান শিক্ষকবান্ধব এবং শিক্ষা বান্ধব সরকারের কাছ থেকে কোনওরকম আন্দোলন  ছাড়াই শিক্ষকদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেয়েছি।

শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আপনি মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে আমাদের নেতা স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান আলম সাজুর দাবি ছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ সরকারি চাকরিজীবীদের ন্যায় আমাদের যাতে ১০০% ঈদ উৎসবা ভাতা, ৪০% বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা এবং স্বেচ্ছায় বদলি ব্যবস্থা চালু করা হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি শিক্ষকদের চেয়ে কম স্কেলে বেতন পায়। তিনি দাবি করেন, সরকারি শিক্ষকদের যেহেতু তাদের স্কেল অনুসারে সবকিছু দেওয়া হয়, আমাদেরকেও নির্বাচনের আগে আমাদের স্কেল অনুযায়ী ১০০% উৎসব ভাতা, ৪০% বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা-ভাতা প্রদান করার। তিনি মাদরাসা, কারিগরি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালায় সামঞ্জস্য আনারও দাবি জানান।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035510063171387