বৈশাখী ভাতা ও কিছু কথা

বাসুদেব কুমার পাল |
পিতামাতার অবদান ছাড়া যেমন সন্তানের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনি শিক্ষিত জাতি কল্পনা করা যায় না । তাই কোন এক লেখক শিক্ষককে দ্বিতীয় জন্মদাতা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু বদলে গেছে যুগের হাওয়া। শিক্ষকদের এখন মৌখিক মর্যাদা দেয়া হলেও বাস্তব তাদের মর্যাদা শূন্যের কোঠায় । আর তাই বেসরকারি শিক্ষক সমাজ বঞ্চনার শিকার হয় প্রতিনিয়ত ।
 
দেশের ৯৭ ভাগ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের যারা শিক্ষা দিয়ে চলেছেন তারাই অবহেলিত। সর্বশেষ বেতন কাঠামোতে তাদের যে সামান্য ইনক্রিমেন্ট ছিল তা তুলে দেয়া হলেও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট তাদের দেয়া হচ্ছে না। তাঁরা যে বাড়ি ভাড়া পান, তা দিয়ে বারান্দাও ভাড়া পাওয়া যায় না। তারা যে চিকিৎসা ভাতা পান, তাতে একজন ভালো ডাক্তারের একবার ফিসের টাকা হয় না। তাঁরা মোমবাতির মত ক্ষয়ে ক্ষয়ে শিক্ষা বিস্তারে জীবনকে নিঃশেষিত করেন, অথচ পদতলের ছায়ায় ডুকরে কাঁদে তাঁদের সন্তানরা। তাঁদের সন্তানদের দেয়া হয় না শিক্ষা ভাতা। 
 
প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচচ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার নির্দেশ দেয়া হয়। সাংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক্ সমাজ তা পালনও করেন। কিন্তু তারা পান না বৈশাখী ভাতা। সন্তানদের দিতে পারেন না নতুন পোশাক। নিজেকেও পুরাতন পোশাকে আসতে হয় বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায়। আর মঙ্গল যাদের ভাগ্যরেখায় অঙ্কিত, তাদের কারো কারো মঙ্গল শোভাযাত্রায় না গেলেও ক্ষতি নেই। হায়! কী বিচিত্র! কি বৈচিত্র্যময় চিত্র! যারা নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করবেন, তাদের সন্তানরা ম্লান মুখে বছরের প্রথম দিন পার করবে। 
 
ওপর মহল থেকে একটি কথা বার বার শোনা যায়, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা পাওয়া উচিত।’ প্রশ্ন আসে উচিতই যদি হবে, তবে দিতে দোষ কোথায়? গত বৈশাখের আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে তিনি জানেন না। যেহেতু গত বৈশাখে তিনি জেনেছিলেন তাহলে এ বৈশাখে তো তার ভুল হওয়া কথা নয়। ভুল হয়তো আমাদের শিক্ষক সমাজের। আমরা মনের ভাষাকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে পারি না। 
 
বহু পুর্বের একটা কবিতার কয়েকটা লাইন খুব মনে পড়ে-
‘তুমি মা কল্পতরু, আমরা সব পোষা গরু
শিখিনি শিং বাঁকানো
আমরা ভুষি পেলে খুশি হব
ঘুষি খেলে বাঁচব না’।
 
যারা শিক্ষক সমাজের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারেন, যারা দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ বেসরকারি শিক্ষকের মত কোন না কোন শিক্ষকের সান্নিধ্যে বসে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তাদের কষ্টকে স্বচক্ষে দেখেছেন কিন্তু হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেননি, তারা যদি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেন তবেই বেসরকারি শিক্ষকদের এ  বৈষম্য থেকে নিষ্কৃতি।
 
লেখক : প্রধান শিক্ষক, আমড়াতলা চাঁপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোংলা, বাগেরহাট।

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025711059570312