ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈষম্যহীন ও নিপীড়নমুক্ত করতে দশ প্রস্তাব করেছে শিক্ষক সমাজ। এ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিপীড়ন, হয়রানি, বৈষম্য ও ভয়ের সংস্কৃতি মুক্ত করা ইত্যাদি।
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মোজাফফর আহমদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার” শীর্ষক সেমিনারে এসব প্রস্তাব করেন।
এ সময় আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমামা ফাতেমা ও আব্দুল কাদেরসহ সঞ্চালক হিসবে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও উপস্থাপক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ড. খোরশেদ আলম ও ড. শাহমান মৈশান।
অনুষ্ঠানের খসড়া উপস্থাপক হিসেবে তাদের প্রস্তাবনা গুলো হলো- ১. শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন-নির্যাতন-বৈষম্যবিরোধী সেল’ গঠন করতে হবে। ২. সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, তা সম্ভব না হলে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের আদেশভুক্ত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা, যদি তাও সম্ভব না হয় তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি একক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখা। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী শিক্ষক অনুপাত বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ২০:১ বাস্তব কারণে মানা না গেলেও ৪০:১ বেশি করা যাবে না। প্রয়োজনে একটি বিভাগে একটি ফোর্সের একাধিক সেকশন-ইউনিট থাকতে পারে। ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফুল-টাইম, ফুল-পেইড, পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। একজন পিএইচডি অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীকে অন্তত ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন দিতে হবে। ৫. বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ এবং হলভিত্তিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে সক্রিয় ও নিয়মিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় ও হল পর্যায়ের ছাত্রসংসদ থেকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উঠে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী কমিটিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৬. স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুই স্তরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থের উৎস হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট সেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। ৭. মেধা এবং আর্থ-সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকেই সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ৮. সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের টিচার্সট্রেনিং বাধ্যতামূলক করতে হবে। অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবে। ৯. শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হবে এবং তা শিক্ষকের পদোন্নতির একটি ক্রাইটেরিয়া হিসবে বিবেচনা করতে হবে। ১০. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে সার্বক্ষণিক বাগেইনিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে শিক্ষক সমিতি।
প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যক্তি নয় বরং সমাজের প্রতিষ্ঠান। এজন্য সমাজের কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল স্টেক হোল্ডার শিক্ষক - শিক্ষার্থী সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলগুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা যোগাযোগ শুরু করেছি। তাই, এখানে যে বিষয়গুলো নিয়ে উঠে এসেছে তার অনেকটাই প্রাসঙ্গিক। এই প্রস্তাবগুলো অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও কার্যকর করা যেতে পারে৷