বৈষম্যের শিকার খুবির ছাত্রী হল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আবাসন, খাবার, পানি, নিয়ম-নীতি ও নজরদারির ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা বৈষম্যের শিকার। ছাত্রীদের অভিযোগ, ছাত্রদের জন্য যেখানে তিনটি হল, সেখানে ছাত্রীদের জন্য রয়েছে দুটি হল। ছাত্র হলগুলোতে যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তার বিপরীতে ছাত্রী হলগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তেহসিন আশরাফ প্রত্যয়। প্রতিবেদনে আরও জানা যায়-

নিম্নমানের খাবার, অনিরাপদ পানি

ছাত্রীদের অভিযোগ, ছাত্র হলগুলোতে প্রতি বেলায় ১০-১৫ পদের খাবার পাওয়া যায়। অথচ ছাত্রী হলের খাবার তালিকায় মুরগির মাংস, তেলাপিয়া মাছ আর ক্ষেত্রবিশেষ সবজির ব্যবস্থা থাকে। তাও আবার নিম্নমানের। এর ওপর বঙ্গমাতা হলের খাবার ও ক্যান্টিনের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে কর্মচারীরা দুর্ব্যবহার করেন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং অপরাজিতা হলে বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা নেই। উপরন্তু খাবার পানিতে দুর্গন্ধ। প্রায়ই হলে পানি থাকে না। এ ছাড়া গোসলের পানিতে পোকামাকড় দেখা যায়।

নিয়ম-নীতি

বঙ্গমাতা হলের নিয়ম অনুযায়ী, ছাত্রীর সঙ্গে বোন বা সহপাঠী সর্বোচ্চ তিন রাত থাকতে পারবেন। জরুরি প্রয়োজনেও অভিভাবকদের হলে থাকার অনুমতি নেই। এ ছাড়া জাতীয় দিবস ও সেমিস্টারের কার্যদিবস চলাকালে অনুমতি ছাড়া ছাত্রীরা হল ছাড়তে পারেন না। হল ছাড়ার জন্য অভিভাবকের চিঠি এবং স্বাস্থ্যগত প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি হলগুলোতে এ ধরনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

প্রশাসনের খবরদারি

বঙ্গমাতা হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এখানে কথায় কথায় সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। প্রভোস্ট স্নাতকোত্তরের আসনের দাবিতে আন্দোলনকারী নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের এক ছাত্রীকে ‘কী করে স্নাতকের সনদপত্র নিয়ে ভর্তি হয় তা দেখে নেব’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আয়েশা আশরাফ হুমকির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত একান্তই বিভাগের। হল প্রশাসনের এখানে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।’

ছেলেদের তিনটি হলে লন্ড্রির ব্যবস্থা থাকলেও মেয়েদের হলে নেই। মেয়েদের কক্ষে ইস্ত্রি ব্যবহারও নিষিদ্ধ। ইস্ত্রি ব্যবহার করায় বঙ্গমাতা হলের গণিত চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর সিট ব্লক থেকে সেমিব্লকে নামিয়ে দেওয়া হয়। দুই মাস হলে আছেন জানিয়ে সাজা মওকুফের অনুরোধ করলে উল্টো তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।

আবাসন সংকট ও নিরাপত্তাহীনতা

একাডেমিক শাখার তথ্যানুযায়ী, আবাসন সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বঙ্গমাতা হলের চারতলা থেকে ছয়তলার বর্ধিতাংশ নির্মাণের কাজ শুরু করে দুই বছর আগে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুনের মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো কাজ চলছে। পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় দুই হলের ৩১০ জন ছাত্রী গাদাগাদি করে সেমিব্লক ও গণরুমে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

ছাত্রীদের অভিযোগ, হলের ভেতরে বছরজুড়ে বর্ধিতাংশ নির্মাণের কাজ চলার কারণে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রায়ই নির্মাণ শ্রমিকরা ছাত্রীদের জানালার দিকে তাকিয়ে অশোভন ইঙ্গিত দেয়। এ কারণে অনেক ছাত্রী জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখেন। হল প্রশাসনের দাবি, কনস্ট্রাকশনের লোকেদের কয়েক দফায় চট লাগানোর কথা বলা হলেও তারা মানেনি।

অব্যবস্থাপনা সমন্বয়হীনতা

হলের অভ্যন্তরে ঝোপঝাড়ের কারণে হল দুটিতে মশা এবং সাপের উপদ্রব রয়েছে। ঝোপঝাড় পরিষ্কারে নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। এ ছাড়া কক্ষ পরিষ্কার করার জন্য ছাত্রদের হলগুলোতে আলাদা কর্মচারী থাকলেও ছাত্রী হলে তা নেই। কক্ষ পরিষ্কারের জন্য অপরাজিতা হলের মেয়েদের মাসিক ২০০-২৫০ টাকা এবং বঙ্গমাতায় ২৫০-৩০০ টাকা গুনতে হয়।

ছাত্রীরা জানান, সমন্বয়হীনতার কারণে এ বছর বঙ্গমাতা হলে ইমপ্রুভমেন্ট মিল এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়নি। অন্যদিকে হল প্রশাসনের দাবি, শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিতে অসম্মতি জানানোয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন হয়নি। আরো অভিযোগ রয়েছে, অপরাজিতা হলে ইমপ্রুভমেন্ট মিলে পরিবেশিত ৮০০ প্যাকেট খাবারের বেশির ভাগই নষ্ট ছিল।

অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট নাজিয়া হাসান খাবারের সমস্যার ব্যাপারটি স্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রীদের সুবিধার্থে ইমপ্রুভমেন্ট মিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কক্ষ পরিষ্কারের জন্য ছাত্রীদের টাকা দেওয়ার ব্যাপারটি আমার জানা নেই, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গমাতা হলের দুজন সহকারী প্রভোস্ট দাবি করেন, সব এখতিয়ার প্রভোস্টের হাতে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ - dainik shiksha ১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072970390319824