সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বৈসম্য নিরসনের আশ্বাসে ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ২২তম দিনে মঙ্গলবার তারা আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। এদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটায় রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সভা শুরু হয়। সভা শেষে রাত নয়টার দিকে ব্রিফিংয়ে অনশন ভেঙে বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার বলেন, শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে। শিক্ষকরা তাদের দাবি দাওয়ার কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমি আশা করছি তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য থাকা উচিন নয়। এ বৈষম্য নিরসন করা হবে।
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে কোন কোন বৈষম্য দূর করা হবে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, জাতীয়করণের বিষয়ে যে দুইটি কমিটি হয়েছে ওই কমিটির রিপোর্টের আলোকে বৈষম্য দূর করা হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ জানান, জাতীয়করণের বিষয়ে যে দুইটি কমিটি হয়েছে সে দুইটি কমিটিতে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মহোদয় ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়। এটি আমাদের বিজয়। আমরা বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরে যাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা বান্ধব। আমি আশা করি তিনি শিক্ষকদের মধ্যে থাকা বৈষম্য নিরসনে ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত নেবেন।
এরপর পানি পান কারিয়ে বিটিএর সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষক নেতাদের অনশন ভাঙান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, শিক্ষা উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুন্নাহার চাঁপাসহ অন্যান্য নেতারা। এসময় বৈঠক কক্ষের বাইরে উপস্থিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা শিক্ষক নেতারা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে মঙ্গলবার সকালে এই অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। কিন্তু সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতার আমন্ত্রণে ধানমণ্ডিতে দলটির সভাপতির কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুন্নাহার চাঁপা প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগে সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই শিক্ষকরা অনশন শুরু করেন। অবস্থান স্থলে উপস্থিত বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাবো ততোক্ষণ আন্দোলন চলবে। আমাদের গন্তব্য এখন দুটি, হয় ঘোষণা বা পাঁচ মিনিটের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ অথবা কবরস্থান। ওই সময় বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে গত ১১ জুলাই মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়কণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন কয়েক হাজার শিক্ষক। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দফায় দফায় তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও রাজপথ ছাড়েননি শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের বিকল্প নেই।