ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে ৭ লাখ টাকা আদায়

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সদ্য সমাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যবহারিক ৯টি বিষয়ের পরীক্ষায় নোয়াখালীর চাটখিল পাঁচগাঁও মাহবুব সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিনা রসিদে আদায় করা এই টাকা কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সংশ্নিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। শিক্ষা সচিবের নিজ এলাকার কলেজ কর্তৃপক্ষের এই দুর্নীতিতে হতবাক এলাকাবাসী।

গত ২ এপ্রিল সারাদেশে একযোগে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এতে চাটখিল পাঁচগাঁও মাহবুব সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছর ৭৯২ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগে জানায়, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ কুমিল্লা বোর্ড নির্ধারিত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৭৫৫ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৯৫ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। মূল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গত ১৫ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক মোবাইল ফোনে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান, ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় সংশ্নিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতায় স্বাক্ষর করার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিষয়প্রতি ৩০০ টাকা হারে আদায় করেন। যে সব শিক্ষার্থী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, চলতি বছর এই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ১৩২ শিক্ষার্থী ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। এখানে জীববিজ্ঞান বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং পদার্থবিদ্যা ১ম ও ২য় পত্রে ৩০০ টাকা হারে ১৩২ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া কৃষি শিক্ষা বিষয়ে ৩৭৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ টাকা এবং আইসিটি বিষয়ে ৬২৭ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ লাখ ৮৮ হাজার ১০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। অবৈধভাবে আদায় করা ৬ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে গেছে।
 
একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতায় সংশ্নিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা স্বাক্ষর করার সময় তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন। অনেক অভিভাবক সন্তানের ভালো ফলের আশায় কষ্ট করে হলেও ব্যবহারিক পরীক্ষার অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, ফরম পূরণের সময় একবার এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় আরেকবার টাকা নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক? অভিভাবকরা বলেন, কম খরচে ভালো লেখাপড়া করানোর আশা নিয়ে সন্তানদের সরকারি কলেজে ভর্তি করেছি। এখন দেখছি সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ বেসরকারি কলেজের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষক বলেন, সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি; তবে কৃষি বিভাগের প্রভাষক উত্তম কুমার ঘোষ ও জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মেহেদি হাসান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নিয়েছেন। চাটখিল উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় টাকা নেওয়া অযৌক্তিক।
 
তবে আই সি টি বিভাগের প্রভাষক শাহাদাত হোসেন ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ সাদেকের সঙ্গে কথা বললে তিনি ব্যবহারিক পরীক্ষায় কিছু টাকা নেওয়ার বিষয় স্বীকার করেন। তবে টাকা ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
 
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যন অধ্যাপক রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা না নেওয়ার জন্য বোর্ডের নির্দেশ রয়েছে। এই নির্দেশ অমান্য করে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যদি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা আদায় করে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068378448486328