ব্যাংকের ‘সংক্ষিপ্ত তালিকা’ ও চাকরি প্রত্যাশীদের স্বপ্ন

রাসেল মিয়া |

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ায়  ফি বাবদ চাকরি প্রত্যাশীদের থেকে কোনো অর্থ নেওয়া যাবে না এই মর্মে গৃহীত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয় ছিল। চাকরি প্রত্যাশীদের যোগ্যতানুযায়ী চাকরি পাওয়া তাদের নাগরিক অধিকার, সেটার জন্য চাকরি প্রত্যাশী বেকারদের থেকে অর্থ নেওয়াটা জুলুমের পর্যায়ে পড়ে। অথচ প্রতিটা সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি প্রত্যাশীদের নিকট হতে ফি বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে থাকে যা অনেক ক্ষেত্রেই চাকরি প্রত্যাশী বেকারদের বহন করা বেশ কষ্টসাধ্য। ফি বাবদ অর্থ নেওয়ার পেছনে প্রতিষ্ঠানগুলোর যুক্তি হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তাদের একটা বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয় যা তাদের দৈনন্দিন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে না। তাদের মতে, কর্মী নিয়োগ ব্যয়টা যেহেতু একটি অতিরিক্ত ব্যয়, তাই তাদের ব্যয়টুকু উঠিয়ে নেওয়ার জন্য তারা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ধার্যকৃত ফি তাদের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যয় থেকে অনেক বেশি। আর এ ফি’র নামে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় চাকরি প্রত্যাশী বেকারদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া এক প্রকারের জুলুম ছাড়া আর কিছু নয়। সেই জুলুমটা কমানোর জন্যই মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ম করেছে যে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রত্যাশীদের থেকে ফি বাবদ কোনো প্রকার অর্থ নিতে পারবে না।

যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নিয়ম-নীতি ব্যাংকসহ অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানতে বাধ্য, তাই তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যয় কমানোর জন্য ‘সংক্ষিপ্ত তালিকা’র নামে এক অভিনব কায়দা আবিষ্কার করেছেন (সরকার মালিকানাধীন ব্যাংক ব্যতীত)।

সদ্য লেখাপড়া শেষ করা চাকরি প্রত্যাশী অধিকাংশ তরুণদের কাছে নিশ্চিতভাবেই বেসরকারি ব্যাংক একটি স্বপ্নের ঠিকানা। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকের সংক্ষিপ্ত তালিকা নামক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকে সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যাংক সেক্টরে প্রবেশ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে।

গত ছয় মাসে বেসরকারি ব্যাংকের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, একেকটি ব্যাংক একেকভাবে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র ইস্যু করছে। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে অধিকাংশই অপেক্ষাকৃত পুরাতন চার-পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কর্মী নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করছে। ফলে দেশের অন্যসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষত অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও এসব সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঢালাওভাবে বাদ পড়ছে। আবার কিছু ব্যাংক সিজিপিএ এর ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত তালিকা করছে যেখানে দেখা গেছে কোনো কোনো চাকরি প্রত্যাশীর অপেক্ষাকৃত ভালো সিজিপিএ থাকা সত্ত্বেও সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম আসছে না। আবার তার অপেক্ষায় কম সিজিপিএ-ধারীরাও সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসছে।

সর্বোপরি, বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃক এই সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়ন কিসের ভিত্তিতে করা হচ্ছে কিংবা তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়নের মানদণ্ডটি কি সেটি সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের নিকট সুস্পষ্ট নয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উচিত কর্মী নিয়োগের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই করার একটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড তৈরি করা যার ভিত্তিতে তারা সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়ন হবে। তবে মানদণ্ড তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই সাধারণ শিক্ষার্থীর সমান অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এটা বুঝতে হবে যে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ফি বাবদ কোনো অর্থ নেওয়া যাবে না কল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বেসরকারি ব্যাংকের দিকে ছোঁড়া ইটের প্রতি-উত্তর হিসেবে বেসরকারি ব্যাংক সংক্ষিপ্ত তালিকা নামক যে পাটকেলটি মারতে চেয়েছে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকে না গিয়ে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের গায়ে গিয়ে পড়েছে!

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043740272521973