ব্যাচ করে প্রাইভেট–বাণিজ্য চলছে করোনার মধ্যেও

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা মহামারির কারণে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় এই নির্দেশ অমান্য করে কিছু অর্থলোভী শিক্ষক প্রাইভেট–বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব শিক্ষক তাঁদের বাসা অথবা ভাড়া করা কক্ষে ব্যাচ করে একসঙ্গে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসিয়ে এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও ওই শিক্ষকেরা তা কানে তুলছেন না।

আজ বুধবার সরেজমিনে ঘুরে এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকাতে সপ্তাহখানেক হলো প্রকাশ্যেই প্রাইভেট–বাণিজ্য শুরু হয়েছে। দুই উপজেলার অংশ নিয়ে গঠিত কাশিনাথপুরের আশপাশে চারটি কলেজসহ প্রায় ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে সেখানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। এলাকাটি উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে নির্ভয়ে শিক্ষকেরা প্রাইভেট–বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া দুই উপজেলা সদরের কিছু কিছু এলাকাতেও বিশেষ কৌশলে শুরু হয়েছে প্রাইভেট–বাণিজ্য। তবে তা সীমিত আকারে ও গোপনীয় পরিবেশের মধ্যে হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, কাশিনাথপুরে প্রাইভেট পড়ানোর নামে যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই এলাকার বেড়া উপজেলা অংশের হরিদেবপুর ও ফুলবাগান মোড়ের পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। অন্যদিকে সাঁথিয়া উপজেলা অংশের শহীদ নূরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ ও কাশিনাথপুর আব্দুল লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রাইভেট পড়ানোর সুবিধার জন্য শিক্ষকেরা ওই সব স্থানে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। প্রত্যেকের বাসায় রয়েছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বিশেষ কক্ষ। কক্ষগুলো বেশ ছোট হলেও সেখানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বেঞ্চ ঢুকিয়ে তাতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থী বসানো হচ্ছে। এভাবে প্রতি ব্যাচে ৩০ থেকে ৩৫ জন বা তারও বেশি শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইভেট–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকেরা দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। প্রাইভেট ও কোচিং নিষিদ্ধ করার পর বেশ কিছুদিন তাঁরা পড়ানো বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক হলো, আবারও তাঁরা আগের মতোই প্রায় প্রকাশ্যে প্রাইভেট–বাণিজ্য শুরু করেছেন।

বেড়া উপজেলার হরিদেবপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাড়ির কাছেই দু-তিনজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রতি ব্যাচে ৩০ থেকে ৩৫ জনকে ছোট কক্ষে বসিয়ে তাঁরা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। আমি এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল হয়নি।’

বেড়া উপজেলার নয়াবাড়ী গ্রামের শহীদুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের সহপাঠীরা বেশ কিছুদিন হলো শিক্ষকদের বাড়িতে গিয়ে গাদাগাদি করে বসে প্রাইভেট পড়ছে। তবে তিনি তাঁর ছেলেকে প্রাইভেট পড়া দূরের কথা, বাইরেই বের হতে দিচ্ছেন না। তিনি জানান, সকালে রাস্তায় বের হলে শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে শিক্ষকদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যেতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে চললে করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এই অভিভাবক আশঙ্কা করেন।

হরিদেবপুর এলাকায় প্রাইভেট পড়ান এমন এক শিক্ষক জানান, অভিভাবকদের চাপে তাঁর মতো কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রাইভেট পড়ানোর কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে বলে তিনি দাবি করেন।

নাটিয়াবাড়ী ধোবাখোলা করোনেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগ ওঠায় আমার প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষককে সতর্ক করেছি। এরপরেও যদি আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান, তবে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। সাঁথিয়ার ইউএনও এস এম জামাল আহমেদও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সূত্র: প্রথমআলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035851001739502