১৯৮৬ বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনার সেই ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের রেশ ধরে ফুটবলে এখনো আর্জেন্টিনাকে শত্রু ভাবে ইংলিশরা। সেই ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ফরোয়ার্ড গ্যারি লিনেকার এবার লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি দেখতে উন্মুখ।
লিনেকারের ভাষায়, ‘লিওকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে এবার ঋণমুক্ত হবে ফুটবল।’ কাতার বিশ্বকাপের রবিবাসরীয় ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ এমবাপ্পের ফ্রান্স। এক ফ্রান্স ছাড়া লিনেকারের মতো বাকি ফুটবলবিশ্বেরও একই চাওয়া-মেসির হাতে উঠুক বিশ্বকাপ শিরোপা।’
যারা আর্জেন্টিনার সমর্থক নন, তাদেরও নীল-সাদার অনুরাগী বানিয়ে ফেলেছেন বাঁ পায়ের জাদুকর। ৩৫ বছর বয়সেও তারুণ্যের ঝলকে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে মেসি যেন মুছে দিয়েছেন সব বিভেদের দেওয়াল।
প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে কতশত হীরন্ময় মুহূর্তই না উপহার দিয়েছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। নামের পাশে তার অসংখ্য রেকর্ড কীর্তি। ক্লাব ফুটবলে জেতার আর কিছুই বাকি রাখেননি। দেশের হয়ে জিতেছেন অলিম্পিকের সোনা, কোপা আমেরিকা। শুধু বিশ্বকাপ ট্রফিতেই এখনো চুমু আঁকা হয়নি মেসির। সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর শেষ সুযোগ রোববার।
এবার ফাইনালে ওঠার পথে অগ্নিগর্ভ কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেই নেদারল্যান্ডসের সাবেক তারকা ক্লেরেন্স সিডর্ফও রোববার গলা ফাটাবেন মেসির জন্য, ‘যদি ফুটবল-বিধাতা থেকে থাকেন, মেসিকে বিশ্বকাপ জিততে দেখে তিনিও খুশি হবেন।’
নেদারল্যান্ডস-বধের পর সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। গোল করে ও করিয়ে এ ম্যাচেও ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন মেসি। জাদুকরী ড্রিবলিংয়ে যাকে বোকা বানিয়ে আলভারেজকে দিয়ে দলের শেষ গোলটি করিয়েছিলেন মেসি, সেই ক্রোট ডিফেন্ডার গাভারদিওলের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর, ‘আমি মেসির অন্ধ ভক্ত। ছোটবেলায় বাড়ির অন্যরা যখন রোনাল্ডোকে সমর্থন দিত, আমি একাই মেসির হয়ে গলা ফাটাতাম। আমরা যেহেতু আর শিরোপার দৌড়ে নেই, আমি আমার নায়কের হাতেই বিশ্বকাপ দেখতে চাইব।’
আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলাররা আগেই মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। ফুটবলের রাজা পেলে হাসপাতালে বসে মেসিদের খেলা দেখছেন।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ব্রাজিলের ৩৩ শতাংশ মানুষের দ্বিতীয় পছন্দের দল এখন আর্জেন্টিনা। নেইমারদের বিদায়ের পর অনেক ব্রাজিলীয় সমর্থক আর্জেন্টিনার জার্সি পরে রোববারের ফাইনাল দেখবেন! তেমনি একজন কাতার থেকে ভাঙা হৃদয়ে সাও পাওলোতে ফেরা হোসে আরলানদো দস সান্তোস, ‘একজন ফুটবল অনুরাগী হিসাবে মনে করি, এবারের বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার প্রাপ্য। এত ভালো একটা দল ওরা। ওদের সমর্থন দেওয়াই যায়। এতে কোনো লজ্জা নেই।’
ব্রাজিলের ৪৯ বছর বয়সি অর্থনীতিবিদ আলেক্সজান্দ্রে কালদাসও বললেন একই কথা, ‘ব্রাজিল বাদ পড়ার পর আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছি। কারণ আমার দেখা সেরা ফুটবলার মেসি। এই শিরোপা তারই প্রাপ্য। আমার ছেলেও মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চায়। সে স্প্যানিশ শিখছে যাতে মেসির কাছে অটোগ্রাফ চাইতে পারে।’