জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম মেধা তালিকা থেকে ভর্তি শেষ হবে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর)। গত ২৮ নভেম্বর সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সব অনুষদে ভর্তির জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু দুপুরের পর কলা ও মানবিকী অনুষদভুক্ত 'সি' ইউনিটের ফল তুলে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে বলা হয়, ফলাফলের বিভাগভিত্তিক আসন সংখ্যার হিসাবে সমস্যা থাকায় ফল তুলে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আসল ঘটনা হলো 'সি' ইউনিটের পূর্বাপর প্রকাশিত ফলাফলে রয়েছে ব্যাপক গরমিল। আগে প্রকাশিত ফলাফলে ভর্তির জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে এমন ২৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পরে প্রকাশিত তালিকায় নতুন করে ২৭ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। এমন জটিলতায় ২৯ শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ হলেও এর দায় নিতে নারাজ সংশ্নিষ্ট প্রশাসন। ফল প্রকাশ নিয়ে প্রশাসনের এমন কাণ্ডকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, ফলাফল বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, আগে প্রকাশিত তালিকায় ব্যবসায় শিক্ষা 'মেয়ে' শাখায় সারাওয়াত মাহাজাবিন, তামান্না পারভীন ও বৃষ্টি সরকারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এভাবে মানবিকের 'মেয়ে' শাখা থেকে সুরাইয়া আক্তার রাত্রি ও দীপিকা মণ্ডল; মানবিকের 'ছেলে' শাখায় মো. মাহাফুজ্জামান, অনুপম রায়, নাদু মিয়া ও সজল; বিজ্ঞান 'মেয়ে' শাখা থেকে আসমা আক্তার, জারীন তাসনিম ও মেহজাবিন আফরোজ; বিজ্ঞান 'ছেলে' শাখা থেকে আনোয়ারুল আজিম, আজহারুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাফিজ খান, রেজা মো. সাজিদুল করিম শুভ, সিরাজুস সালেকীন, মো. আবির ও আজমাইন আকিল আবিদকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নতুন প্রকাশিত ফলাফলের তালিকায় ব্যবসায় শিক্ষার 'মেয়ে' শাখায় নাদিয়া ইসলাম, শাহরিন জাওয়া রিফাত ও মওদুনা তানজিম খানকে যোগ করা হয়েছে। এভাবে মানবিকের 'মেয়ে' শাখায় সুমাইয়া আক্তার ও নুসরাত জাহান অন্তরা; মানবিকের ছেলে শাখায় এনায়েতুর রহমান ও রুবেল মিয়া; বিজ্ঞান 'মেয়ে' শাখায় স্বর্ণালী আক্তার, ফাতেমা-তুজ-জোহরা ও দিশা সরকার; বিজ্ঞান 'ছেলে' শাখায় আহমেদ তানভীর রিফাত, মাসুদ রানা, জায়েদ হোসেন আলিফ, আব্দুর রহমান খান সার্জিল, বিল্লাল হোসেন তুহিন, অলোক দাস ও ইমতিয়াজ ইকবালকে যোগ করা হয়েছে।
এছাড়া 'সি' ইউনিটে ইংরেজি বিভাগের জন্য আলাদা করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিভাগের আগে প্রকাশিত ফলের 'ছেলে' তালিকা থেকে এনায়েতুর রহমান, আতিক শাহরিয়ার অন্তর, শাহরিয়ার ইকবাল চৌধুরী রাজ, রুবেল মিয়া, সুলেমান সিদ্দিক, রিফাত আল আজাদ, সাকিন আহমেদ সিজান, রুদ্র তাপস চৌধুরী ও জুবায়ের আহমেদকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আনোয়ারুল আজিম, আজহারুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাফিজ খান, রেজা মো. সাজিদুল করিম শুভ, সিরাজুস সালেকীন, মো. আবির, আজমাইন আকিল আবিদ, মাহিদুল হক তানভীর ও জুবায়ের বিন আরিফকে যোগ করা হয়েছে। ফলাফলের এই তালিকায় গরমিলের ব্যাপারে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন মোজাম্মেল হক বলেন, 'এই গরমিলের বিষয়টি আগে থেকে জানতাম না। যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়। এ দায় আমাদের নয়।
ফলাফলের এই হেরফেরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ভুল হতেই পারে, সে জন্য কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন তার দায় নেবে।
জাবি ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বেখেয়ালিপনা শুধু দায়িত্বের অবহেলাই নয়, ভর্তি কার্যক্রমে স্বচ্ছতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে ফোন দিলে তার একান্ত সচিব জানান, তিনি চোখের ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে আছেন। আর উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নরুল আলম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) ও ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবু হাসানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সৌজন্যে: সমকাল