নগরীর এসওএস হারম্যান মাইনার স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পুনঃভর্তিতে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ফি আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া বই-খাতা ও নির্ধারিত পোশাক তৈরিতে লাগছে আরও ৫ হাজার টাকা। আর এই ব্যয় বহন করতে অভিভাবকদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু হারম্যান মাইনার নয়, নগরীর অনেক বেসরকারি স্কুলে এভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। যদিও নানা ফি’র নামে এভাবে অর্থ আদায় না করতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের (সংশোধিত) পরিপত্র এবং ২০১৮ সালের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি স্কুল ভর্তিতে ঢাকা মহানগর ছাড়া অন্য সব ক’টি মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না। এছাড়া একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণি থেকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি এবং উন্নয়ন ফি খাতে কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না। এই নির্দেশনা মানা না হলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করা হবে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানছে না নগরীর অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ হাজার টাকা নেয়া হলেও পুনঃভর্তি এবং সেশন ফিসহ নানা খাতে কৌশলে আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছামতো ফি। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে একই ফি আদায় করা হচ্ছে নতুন ও পুনঃভর্তির ক্ষেত্রে। গত বছর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তিতে নানা কৌশলে অর্থ আদায় শুরু করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষেরা সন্তানের ভর্তি ফি দিতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন।
এসওএস হারম্যান মাইনার স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, এসওএস শিশু পল্লীর স্কুলটি কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। তারপরও স্কুলটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে চট্টগ্রামের শিক্ষা কর্মকর্তারা যোগ দেন। তিনি জানান, ১১ হাজার ৯০০ টাকা ভর্তি ফি দিয়ে তার মেয়েকে প্রেপ-১ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছিলেন। একইভাবে প্রেপ-২, নার্সারি ও প্রথম শ্রেণিতে পুনঃভর্তি করান। এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, এখন পুনঃভর্তি ফি বাবদ সাড়ে ১১ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। এর বাইরে বই-খাতা মিলে আরও তিন হাজার টাকার বেশি দিতে হবে। অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে টিসি নিতে চাইলে সাড়ে ১১ হাজার টাকা দাবি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পিতৃহীন ও পরিত্যক্ত শিশুদের বিকাশে কানাডিয়ান দাতা সংস্থার অনুদানে পরিচালিত হয় ‘এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজেস বাংলাদেশ’। এর অধীনে এসওএস হারম্যান মাইনার স্কুলটি পরিচালিত হয়। এসব শিশুর কল্যাণে দেশের অনেক ধনী ব্যক্তিও আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকেন এনজিও সংস্থাটিতে। এরপরও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের লালন-পালনের খরচ বহন করার কথা বলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের ভর্তি করানো হয়। তবে ভর্তি কার্যক্রমসহ কোনো ক্ষেত্রেই মানা হয় না সরকারি নিয়মনীতি।
এসওএস হারম্যান মাইনার স্কুলের একটি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে স্কুলের প্রেপ-১ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭টি ক্লাসে মোট ২৯১ শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে এসওএস শিশু পল্লীর ৪৪ জন, হতদরিদ্র ৫২ জন ও কমিউনিটির (এলাকার সামর্থ্যবান লোকজনের সন্তান) ১৯৫ জন। এই ১৯৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গড়ে ১২ হাজার টাকা হিসেবে কেবল ভর্তিতে ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে এবার এখনও ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এই তথ্য সুস্পষ্ট করে জানাতে পারেনি সূত্র। একই থানার ‘সিলভার বেলস কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড সিলভার বেলস গার্লস হাই স্কুল’-এ নীতিমালা অনুযায়ী কেবল ১ হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছে পুনঃভর্তিতে।
এ প্রসঙ্গে এসওএস হারম্যান মাইনার স্কুল চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ মিসেস সংযুক্তা দাশ বলেন, নীতিমালা মেনে ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন চার্জসহ ফির পরিমাণ হয়তো অভিভাবকের কাছে বেশি মনে হচ্ছে।
নগরীর নন্দনকাননে অবস্থিত ‘ফুলকি সহজপাঠ বিদ্যালয়’-এ খেলাপড়া শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তিতে ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। যদিও এর বিবরণে ভর্তি ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক বলেন, সরকারি নীতিমালা মোতাবেক ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।