বহুদিন ধরে আলোচনায় থাকা বিদ্যুতের করিডর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ভারতকে বিদ্যুতের করিডর দিতে রাজি হয়েছে। এই করিডর দেয়ার কারণে বাংলাদেশের কী ধরনের লাভ হতে পারে তা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগ ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির ২১তম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার খুলনায় এই সভা হয়।
ভারতকে করিডর দেয়ার বিষয়ে আলোচনা থাকলেও নেপাল থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশে আনার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়নি। ভারতের বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশ এই বিদ্যুৎ আনতে পারছে না। আগামী যৌথ সভার এজেন্ডায় এ বিষয়টি থাকতে পারে বলে জানা গেছে। তবে ওই যৌথ সভা এক বছর পরে হবে এবং সেটা হবে ভারতে। বৈঠকে উপস্থিত দুই কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ ভারতের মূল ভূখণ্ডে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার বা বিদ্যুতের করিডর চেয়ে আসছিল ভারত। এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হলেও এতদিন বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের করিডর দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের করিডরটি কাটিহার-পার্বতীপুর-বরানগর ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নামে হবে।
ওজোপাডিকোর খুলনা বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের বিদ্যুৎ সচিব অলক কুমার। সভায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা-সংক্রান্ত চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
সভায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানিসহ বিআইএফপিসিএলের মাধ্যমে ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের সম্ভাবনা এবং বিআইএফপিসিএল কর্তৃক সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারত-বাংলাদেশ আন্তসংযোগ লিংকসহ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় জিএমআর কর্তৃক নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ হতে ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর, ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশে সেই বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
তবে বৈঠকে নেপাল থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয় আলোচনা হয়নি। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা। তবে ভারতের বিরোধিতার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না।
এ ছাড়া সভায় বাগেরহাটের রামপালে বাস্তবায়নাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের পরিচালন ও দ্বিতীয় ইউনিটের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি বছরের জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের সিনক্রোনাইজ করা হবে মর্মে সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
এর আগে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ২১তম সভা বুধবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ২০তম সভা গত বছর মে মাসে ভারতের ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির পরবর্তী সভা চলতি বছরের নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।